ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে দেখিয়ে দিয়েছে, অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলা যায়, যদি সাহস ও নিষ্ঠা থাকলে। এই বিজয় কেবল একটি পদের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যত তৈরি করার জন্য হয়েছে। মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে, যেখানে সততা এবং যোগ্যতা সর্বোচ্চ সম্মান পাচ্ছে। এই নির্বাচনের ফলাফল ছাত্রসমাজকে অনুপ্রেরণা যোগাবে যে, সত্যের পথে থেকে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই নির্বাচনটি ছিল অতীতের রীতির বাইরে একটা বিরল ঘটনা। শিবিরের প্রার্থী সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ এবং মহিউদ্দিন খান অসাধারণ পারফরম্যান্স করে এক বছরের মধ্যে চমক তৈরি করেছেন। শিবিরের এই তিন প্রার্থীে নির্বাচনে বিপুল ভোটাধিক্য পেয়েছেন। ভিপি পদে সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদ পান ৫৬৫৮ ভোট, যা অর্ধেকেরও কম। জিএস পদে ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে থাকলেও, ছাত্রদলের হামিম পেয়েছেন ৫২৮৩ ভোট। অপ্রতিরোধ্য এই জয়ের ব্যবধান আরো বড় হয় এজিএস পদের নির্বাচনে, যেখানে মহিউদ্দিন খান ৯৫০১ ভোট পান এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মায়েদ ৪২৫৪ ভোট। এভাবে, নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে ছাত্রসমাজের নতুন নেতৃত্বের আগমন হয়েছে।
প্রথমে দেখা যাক, মহিউদ্দিন খান মহিকে। তার চোখে দেখানো ভদ্রতা এবং পরিপাটি পোশাকের মাধ্যমে তার সহজাত শ্রদ্ধাশীলতা স্পষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী অত্যন্ত মেধাবী ও কৃতী। তিনি অনার্সে ৩.৯৩ দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং মাস্টার্সে ৪.০০ সিজিপিএ পাবার মাধ্যমে নিজেকে বোঝানো সম্ভব। জননন্দিত এই ছাত্র ছাত্র জীবনেই ছাত্রলীগের আন্দোলন-নেতৃত্বে সক্রিয় ছিলেন। স্নাতকোত্তর শেষের পর মাত্র তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেয়ার ইতিহাসও তার শিক্ষাজীবনের দৃষ্টান্ত। এই বৈশিষ্ট্যই তাকে এজিএস নির্বাচনে বিজয়ী করে।
আসুন, এখন দেখা যাক এস এম ফরহাদের। ছোটখাটো নিয়মে হলেও তার রাজনৈতিক দখলদারিত্ব আছে। তিনি একজন স্মার্ট ডিবেটর, आलोচক, এবং সমালোচনার জবাব দেয়ার জন্য চৌকস। কখনো ছাত্রদলের ভুল ধরিয়ে দিয়ে, কখনো বাম রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন। গত ২০০৪ সালে তার পরিচয় প্রকাশের পর এবং তার রুমমেটের কাছ থেকে তার প্রকৃত রাজনৈতিক পরিচয় জানার পর সবাই অবাক হয়েছিল। ছাত্রজীবনে প্রচার-প্রচারণার প্রকাশ্য অংশ না থাকলেও, তার বিজয় নিশ্চিত ছিল মানসিক প্রস্তুতির ফল।
আরো এক নাম, যিনি ডাকসু ভবিষ্যতের দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব দেবেন, তিনি হলেন সাদিক কায়েম। তিনি শিবিরের সক্রিয় ও অন্যতম নেতা। তার প্রচারণা ছিল খুব সাধারণ, তবে তার বিজয় ছিল বিশাল। বর্তমানের ডাকসু ইতিহাসে একমাত্র ভিপি হিসেবে শিবিরের প্রতিনিধিত্বে নির্বাচিত হন তিনি। বিজয়ের দিন নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় তাকে দেখা যায়, যেখানে আল্লাহর নাম করে বলে গেছেন, ‘ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি নয়, ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষা।’ তার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের আবাসন, চিকিৎসা, খাদ্য, লাইব্রেরি, লাইসেন্স এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করার ব্যাপারে সক্রিয় থাকা। তিনি সেই এলাকা থেকে উঠে এসেছেন যেখানে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেও তা অর্জন করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কঠিন সংগ্রাম করে তিনি সফল হন এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে থাকাকালীন তার নেতৃত্বের গুণাবলী প্রমাণিত হয়ে ওঠে। এখন দেখার বিষয়, তিনি কতটা সফল হন ভবিষ্যতে।
সর্বশেষ বলতে হয়, জীবনে বড় কিছু পেতে হলে মেধার পাশাপাশি দৃঢ় সংকল্প ও সততা জরুরি। এই নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, যখন মেধা ও সততা একসাথে যুক্ত হয়, তখন কোনো বাধাই পার হয় না। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনের এই মুহূর্তে, বিজয় LLfreshậy শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন। এই পথচলাকে নতুন দিনের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।