ডাকসু নির্বাচনের এই জয় শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় প্রবৃদ্ধির বার্তা নিয়ে এসেছে। এই ইতিহাসের পেছনে লুকানো রয়েছে স্বপ্ন দেখার সাহস, সেই সঙ্গে নিষ্ঠার গুরুত্ব। শুধু বিজয় অর্জনের জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর ও উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার জন্যও শিক্ষার্থীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মেধা এবং পরিশ্রমের যোগসূত্র যে কত শক্তিশালী, সেটি এই নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করেছে; নতুন ইতিহাস রচনা হয়েছে এখানে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেখা গেছে, সততা ও মেধার সম্মিলনে কত বড় সফলতা সম্ভব, যেখানে বিজয় এসেছে ছাত্রলীগের তিন প্রার্থীর জন্য। তাদের বিশদ পরিচয় জানার জন্য চলুন দেখে নিই তাদের জীবন ও সংগ্রামের কিছু দিক।
প্রথমে আসি মহিউদ্দিন খানের কথায়। চোখে চশমা, পরনে পাঞ্জাবি, ভদ্রতার পরিচয় তিনি স্পষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণীতে ৩.৯৩ সিজিপিএয়ের পাশাপাশি মাস্টার্সেও ৪.০০ সিজিপিএ পেয়ে সবার মনে ছাপ ফেলেছেন। তিনি বিজয় ‘৭১ হলে থাকতেন এবং ছাত্র রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। অসাধারণ মানসিকতা ও মেধার জন্য তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীর চোখে অন্যতম পছন্দের একজন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তার পড়াশোনা শেষ করে হল ত্যাগ করেন, যা উৎসাহ উদ্দীপনা জাগায়। এই সফলতা তাকে অজস্র মানুষের অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
অপরদিকে, এস এম ফরহাদ আবার নানা রঙে ভরা জীবনযাত্রার একজন প্রতিনিধি। ছোটখাটো দেখালেও তার দায়িত্বের ব্যাপ্তি অনেক বেশি। তিনি একজন প্রখ্যাত ডিবেটার, যিনি ছাত্রদলের ভুলের পাশাপাশি বাম রাজনীতি নিয়েও বিশ্লেষণ করেন। অনেক বিতর্কের মাঝে তিনি নিজের দলে অটুট থেকেছেন। তার পরিচয় বেশ গোপন রাখতে চেয়েছেন, কিন্তু এক পর্যায়ে সব কিছু প্রকাশ পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু, আর এই জয় তারই দৃঢ়তার ফল।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন সাদিক কায়েম, যিনি আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ নেতৃত্বে ডা.সু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি নেতা হিসেবে খুবই সাধারণ, শান্ত স্বভাবের, কিন্তু দৃঢ় সিদ্ধান্তপ্রপ্ত। বিজয়ের রাতে তিনি নামাজরত অবস্থায় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে তিনি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন আবাসন সংকট, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও খাদ্য সমস্যা দূর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চান। তার যে পটভূমি, সেখানে তার সফলতার প্রতিযোগিতা ছিল খুবই কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসাধারণ ফলাফলের মাধ্যমে তিনি উঠে এসেছেন এবং এখন নতুন নেতৃত্বের আশা জাগিয়েছেন।
বলা চলে, জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হলে শুধু মেধা নয়, সাথে থাকা দরকার দৃঢ় সংকল্প ও সততা। এই নির্বাচনের ফল দেখিয়ে দিল, যখন এগুলোর সমন্বয় ঘটে, তখন অসাধ্য কিছু নয়। ছাত্র রাজনীতির কলঙ্কমুক্ত নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এখানে, যা স্বপ্ন দেখাতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। বিজয় আসলে কেবল পদ বা পুরস্কার নয়, এটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর নতুন স্বপ্নের প্রতীক। এই নতুন সূচনায় আলো ফুটুক আগামী দিনের পথচলা।
সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত:
ডঃ তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব — বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপের গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর।
দাউদ ইব্রাহিম হাসান — বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট, ছাত্র প্রতিনিধি ও সরকারি সংস্থার কাজে যুক্ত আছেন।