বুধবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রামগতি-কমলনগরে এক লাখ ৩০ হাজার গবাদি পশুর জন্য আতঙ্কের ভেতর খামারিরা

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৬৩৩টি খামারে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৯১৫টি গবাদি পশু অবস্থান করছে, আর এই সংখ্যার মধ্যে গভীর উদ্বেগ জাগিয়ে তুলেছে লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি নামের এক মারাত্মক রোগ। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া অ্যানথ্রাক্স রোগের কারণে এই অঞ্চলের গবাদি পশু ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। খামারিরা মনে করছেন, এখন এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যদিও টিকাদানির কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং উদাসীনতা দেখাচ্ছে, যা খামারিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রয়া সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি গবাদি পশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। যদি এ সংক্রমণ অ্যানথ্রাক্সের মতো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এই এলাকার ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি গবাদি পশু এবং সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতি এড়াতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পক্সভাইরাস ও অ্যানথ্রাক্স মূলত গবাদি পশু থেকে উদ্ভূত হয় এবং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে টিকাদানের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হলেও, লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

অধিকাংশ খামারেই লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগে আক্রান্ত গরু, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা বাড়লেও, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা এ পরিস্থিতিতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ও সহায়তা থেকে অনেককে বঞ্চিত বলে জানিয়েছেন কিছু খামার মালিক।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, রামগগিত উপজেলায় রয়েছে ১০২ গরুর খামার, যেখানে মোট ৬৭ হাজার ২৫১টি গরু রয়েছে; ১৩৯ ছাগলের খামারে ১৩ হাজার ৩৩৮টি ছাগল, ৫৯ ভেড়ার খামারে ১০ হাজার ২২৮টি ভেড়া এবং ৮ হাজার মহিষ সহ মোট ৯৯ হাজার ১০৭টি প্রাণী। অন্যদিকে, কমলনগরে ২৫০ গরুর খামারে ২০ হাজার ২৩০ গরু, ৫০টি মহিষের খামারে ৬ হাজার ৫২৫টি মহিষ, ২৫টি ছাগলের খামারে ৪ হাজার ৫৯৮ ছাগল ও ৮টি ভেড়ার খামারে ৪৫৫ ভেড়া রয়েছে। এ দুটি উপজেলায় একীভূতভাবে মোট গবাদি পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৯১৫।

চরগাজী ইউনিয়নের ডেইরী ব্যবসায়ী মোঃ মিলন বলেন, প্রশাসনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে অপ্রতুল। তারা শুধু নামের জন্য অফিস করে, কোনও প্রতিকার বা সহযোগিতা দেয় না। খামারিরা বলছেন, যথাযথ চিকিৎসা ও সতর্কতা ছাড়াই গরু, ছাগল ও ভেড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

অন্য একজন খামার মালিক মোঃ আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ফোন করলে কেউ ফোন ধরে না, কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে না। ফলে, রোগপ্রতিরোধের জন্য গরু ও ছাগলের চিকিৎসা খুবই অনিয়মিত।

চরলক্ষ্মীগ্রামের গরু খামার মালিক গোলাম রব্বানী বলেন, তার সব গরুতেই লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগ রয়েছে। তবে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বা খবর নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জাতীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডাঃ মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ও রামগতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দেখাচ্ছেন আশাবাদ, বলছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অ্যানথ্রাক্স দেখা গেলেও এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত এর কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে কিছু খামারে লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগ ধরা পড়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, কিছু গবাদি পশুর টিকা দেওয়া হচ্ছে, এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খামারকেও টিকা দেওয়া হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন