মঙ্গলবার, ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে মানুষ হয়ে ওঠার গল্প বললেন বাঁধন

বিনোদনজগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন তার ব্যক্তিগত জীবনের সংগ্রাম ও আত্মোপলব্ধির গল্প শোনালেন। ডিভোর্স, রিহ্যাব সেন্টার, তীব্র বিষণ্ণতা, সুইসাইডাল চিন্তা এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি নিজের প্রকৃত পরিচয়ে ফিরে আসার গল্প ভাগ করে নিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’ এর আয়োজিত ‘কথামালা-১৩’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি ‘অভিনয়, অভিনয়শিল্পী এবং আমার জীবন’ সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতাগুলি ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম তার আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন হয়। সেই সময় থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, পড়াশোনা শেষ করা কত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত জীবনের বিপদাপদ তাকে নতুন আলো দেখিয়েছে। একসময় শুধুমাত্র অর্থের জন্য অভিনয় করলেও ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, থেরাপিস্টের প্রশ্ন তাকে নিজের ভেতরে গভীরে প্রবেশ করতে বাধ্য করেছে। এভাবেই তার জীবনে তখন বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এ gehandক। এই সিনেমার জন্য পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের প্রশংসা করে বাঁধন বলেন, তিনিই তাকে একজন নতুন অভিনেত্রী হিসেবে আবিষ্কার করেছেন। নিজের জীবনের অন্ধকার সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ‘আমি বিয়ে করি ১৯ বছর বয়সে। ডিভোর্সের পর আমার জীবন খুব কষ্টে কাটে। শেষ পর্যন্ত আমাকে একটি রিহ্যাব সেন্টারে যেতে হয়, যেখানে আমি ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভুগতাম। আমার সঙ্গে ছিল সুইসাইডাল ভাবনা।’ তিনি আরো বলেন, তিনি ক্রনিক ডিপ্রেশনের রোগী, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ভোগেন এবং নিয়মিত অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ খান। এই বিষয়ে কথা বললে অনেকেই ভাবেন তিনি পাগল, কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমি ভালো আছি এবং এসব রোগের সঙ্গে লড়াই করছি।’ নিজের জীবনের কঠিন সময়ে তিনি নিজেকে ‘ধ্বংসস্তূপ’ হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, ‘বহুবার এমন হয়েছে, যখন আমি ভেঙে পড়িনি, বরং পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছিলাম।’ ২০১৮ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তার জীবন বদলে দেয়। সন্তান অধিকার নিয়ে আইনি লড়াইয়ে তিনি উল্লেখ করেন, “আমার সন্তানটির বাবার কাছ থেকে তাকে ছেড়ে নিতে চেয়েছিল। এই ঘটনাই আমাকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। আমি সমাজের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়াই এবং আইনি লড়াইয়ে সফল হই। শেষ পর্যন্ত আমি আমার সন্তানের সম্পূর্ণ অভিভাবকের মর্যাদা লাভ করি, যা উপমহাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী রায় ছিল। নিজের এই সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওই সময় আমি খুবই অসহায় বোধ করছিলাম। হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন থেকেই আমি আবার দাঁড়ানো শিখি। আমি বুঝতে পারি, আমাকে আমার অধিকার নিজেকে বুঝে নিতে হবে।” রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাঁধন দর্শকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন এবং নিজের সংগ্রামী জীবনকাহিনী তুলে ধরেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন