বুধবার, ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এখন আরও শক্তিশালী ও প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছাতে চলেছেন। দেশের সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশोधन প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কাঠামো ও নেতৃত্বব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। এই সংশোধনী বিলের মাধ্যমে তাদের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে—যা হল ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’, এবং এই পদে থাকবেন বর্তমানে সেনাপ্রধান আসিম মুনির himself। এর ফলে তিনি দেশের সামরিক বাহিনীর একক ও সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে অনন্য সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন।

শনিবার পাকিস্তানের সংসদে উপস্থাপিত এই ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলের মাধ্যমে সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা মূলত সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কাঠামো পরিবর্তনের জন্য। বিল অনুযায়ী, দেশের প্রধানমন্ত্রীවරির পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর প্রধান ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস নিয়োগ করবেন। একই সঙ্গে, এই পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়ার মাধ্যমে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান নিযুক্ত হবেন। এই পদটিও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হবে।

আরো বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব এয়ার ফোর্স ও অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট পদে উন্নীত করার ক্ষমতা রয়েছে সরকারের। এই পদগুলো মর্যাদা ও সুবিধা জীবনের পুরো সময়ের জন্য বজায় থাকবে। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি একবার ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হলে, তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত এই মর্যাদা পাবেন। এর ফলে পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ক্ষমতা সুদৃঢ় হচ্ছে। চার দিনব্যাপী ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের পর মে মাসে পাকিস্তান তাঁকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করে, যা দেশের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা। ওই সংঘর্ষে ভারতের দাবি, পাকিস্তানের অন্তত এক ডজন যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান শান্তি স্থাপনে রাজী হয় এবং দেশের সামরিক কাঠামোতে নতুনভাবে সমন্বিত কমান্ড গঠন করে।

এ পরিস্থিতিতে, ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে তিন বাহিনীর মধ্যে আরও আরও সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ কমান্ড কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। সংশোধন অনুসারে, বর্তমানে চলমান ‘চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’ এই পদটি আগামী ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর বিলুপ্ত হবে। তার বদলে নতুন পদ হবে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’, যা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর এক কট্টর নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকবে।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার শনিবার সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে এই বিল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এতে মোট ৪৯টি ধারাসহ তিনটি প্রধান ও দুইটি সহায়ক বিষয় সংশোধনের আওতায় আসবে। সিনেট চেয়ারম্যান ইউসুফ রেজা গিলানি বিলটি আইন ও বিচারবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে পাঠান বিস্তারিত আলোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজারবাইজান থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মন্ত্রিসভা বৈঠক পরিচালনা করেন। যেখানে সংশোধনীর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এ প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে। দলের নেতা আলি জাফর বলেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা অনুপস্থিত থাকাকালে গুরুত্বপূর্ণ এই বিলের আলোচনা অনুচিত। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ও তার মিত্ররা অপ্রয়োজনে তাড়াহুড়া করে বিলটি দ্রুত পাস করতে চাইছে।

বিরোধীদের এই আপত্তি সত্ত্বেও সরকার জানিয়েছে, এই সংশোধনী আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা ও সামরিক সমন্বয়ের প্রয়োজন থেকে নেয়া হয়েছে। গত মে মাসে সীমান্তের উত্তেজনার পর পাকিস্তান মনে করেছে, বিমূর্ত কমান্ড কাঠামো পরিবর্তন করে একটি একত্রীকরণকৃত সামরিক নেতৃত্ব গঠন খুবই জরুরি।

এছাড়াও, সংশোধনী বিলের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেডারেল সংবিধানিক আদালত অনুমোদন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের নতুন পদ্ধতি এবং প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার কাঠামো সংশোধন।

সব মিলিয়ে, ২৭তম সংবিধান সংশোধনী পাকিস্তানের সামরিক ও সার্বভৌম ক্ষমতাকে বিপ্লবীভাবে বদলে দিচ্ছে— যেখানে বর্তমানে সেনাপ্রধান আসিম মুনির শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর নয়, বরং দেশের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় ও সর্বশক্তিমান ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন