ইউক্রেনের রণাঙ্গনে এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন প্রায় ৭০ হাজার নারী সেনা। ২০২২ সালে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে—প্রায় ২০ শতাংশ। বর্তমানে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নারী সেনা সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে বা ফ্রন্টলাইনে তত্পর রয়েছেন। এই বিশাল সংখ্যক নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণে বড় ভূমিকা রেখেছে আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে ড্রোন যুদ্ধের ব্যবহারে।
ড্রোন প্রযুক্তি যুদ্ধের ধারণা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। এখন নারীরা পেশাগতভাবে কেবল শারীরিক লড়াইয়ে না হয়েও প্রযুক্তিগত মাধ্যমে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। রাশিয়ার তেল স্থাপনা, গোলাবারুদ মজুতঘর ধ্বংস বা নজরদারির কাজে ড্রোন এখন ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তৃতীয় আর্মি কর্পসের ২৬ বছর বয়সী মনকা, যিনি আগে বিদেশে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতেন, এখন একজন এফপিভি ড্রোন চালক। তিনি বলেছেন, প্রযুক্তির কারণে এখন আর ভারি গোলাবারুদ হাতে নিয়ে ছুটতে হয় না, বরং দূর থেকে শত্রুদের ওপর প্রয়োগ করা যায়, যা যুদ্ধের ময়দানে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করেছে।
অন্য দিকে, ২৫ বছর বয়সী ড্রোন পাইলট ইয়াহা বলেন, দূর থেকে শত্রুদের আঘাত করার তার কৌশল এই পথে এগিয়ে এনেছে। তবে তার মতে, যুদ্ধ কোনো রোমাঞ্চকর বিষয় নয়, এটি শৈল্পিক শহীদ ও অপচয় বলেও অভিব্যক্তি করেন তিনি। তবুও, পরিস্থিতি বদলাতে হলে তাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। একইভাবে, একসময় পেশাদার হকি খেলোয়াড় থেকে প্যারামেডিক এবং পরে ড্রোন পাইলট হওয়া ২৭ বছর বয়সী ইমলা বলেন, প্রথমে নার্ভাস থেকেও এখন আত্মবিশ্বাসী যুদ্ধযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
খারতিয়া কর্পসের মতো ইউনিটগুলো এখন নারীদের লক্ষ্য করে বিশেষ নিয়োগ প্রচারণা চালাচ্ছে। খারতিয়ার একজন কর্মকর্তা ভলোদিমির দেহতিয়ারোভ বলেন, প্রযুক্তির বিস্তার, বিশেষ করে ড্রোনের ব্যবহার ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষনির্ভর পেশাগুলোকেও নারীদের জন্য সহজ ও উন্মুক্ত করে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তথ্যমতে, ২০২২ সালের পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের পর থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার আহত হয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে নারীরা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন, যা ইউক্রেনের প্রতিরোধের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।





