সোমবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা এখনো কাটেনি, পরিস্থিতি সংকটাপন্ন

গাজা অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের অবস্থা কেটে যাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, সামনে আরও বড় ধরনের সংকট আসছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি এখনও অনিশ্চিত। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আপাতত দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রতিহত হলেও গাজার পরিস্থিতি এখনো সংকটজনক। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে অনেক মানুষ ন্যূনতম খাদ্য পাচ্ছেন না, আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখনও সন্তোষজনক নয়।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির পর মানবিক ও বাণিজ্যিক খাদ্য সরবরাহ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে, আইপিসি সতর্ক করে বলেছে, যদি আবার যুদ্ধ শুরু হয় এবং সাহায্য সরবরাহ বন্ধ থাকে, তাহলে ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে গাজা আবার দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। চার মাস আগে, সংস্থাটি জানায় যে, গাজায় প্রায় ৫ লাখ ১৪ হাজার মানুষ—গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ—দুর্ভিক্ষের মুখে থাকছেন। এই তথ্যকে তখন ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছিল।

জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির ফলে খাদ্য সরবরাহ ও পুষ্টির মান কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি কাটেনি। গত মাসে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি থাকে বলে দেখানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো এক লক্ষের বেশি মানুষ খাদ্য সংকট নিয়ে জীবন যাপন করছে। তবে পরিস্থিতি অগ্নি ক্ষমতার চরম পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গাজার পরিস্থিতির উন্নতি সম্পর্কে ইসরায়েল ও তার সহায়ক সংস্থাগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনা সমন্বয়কারী সংস্থা কোগাট দাবি করে, এখন প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, যার বেশিরভাগই খাদ্যপণ্য। অপরদিকে, হামাস এই তথ্য অস্বীকার করে জানায়, প্রবেশের সংখ্যা সত্যের সাথে মেলে না এবং সহায়তার পরিমাণ অনেক কম। তাদের দাবি, ইসরায়েল প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশে বাঁধা দিচ্ছে। ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় বলছে, খাদ্যসংকটের কোনো অস্তিত্ব নেই, বরং সমস্যা হচ্ছে বিতরণ ব্যবস্থাপনায়।

অন্তর্বর্তী সময়ে গাজার পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে দেখা যায়, এখনো এক লাখেরও বেশি মানুষ চরম খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজার মতো জনবহুল ছোট এলাকাগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় সহায়তা যথেষ্ট নয়। তারা অভিযোগ করে, ইসরায়েল নানা বাধা দিয়ে যাচ্ছে খাদ্য ও জরুরি সামগ্রী প্রবেশে। তবে ইসরায়েল মনে করে, খাদ্য সরবরাহের ব্যাপারটা স্বাভাবিক রয়েছে এবং ঘটনা তারাই কেন্দ্র করে কর্মরত।

গাজার পরিস্থিতি এখনও খুবই খারাপ, তবে যুদ্ধবিরতির পর সাময়িক কিছু উন্নতি দেখা গেছে। তবে বিপর্যয় এড়ানোর জন্য এই পরিস্থিতি বহাল রাখতে আন্তর্জাতিক দিক থেকে আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে, গাজায় চলমান সংঘর্ষের ফলে গত কয়েক মাসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, এখনও বহু ফিলিস্তিনি হতাহত বা চাপা পড়েছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে। রাশিয়ায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত দাবি করেছেন, এখনও দখলদার বাহিনী ন্যূনতম মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। যুদ্ধের কোনো সমাধান আসেনি, এবং যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি এখনও খুবই জটিল।

পোস্টটি শেয়ার করুন