বুধবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গালে শর্ষের তেল মেখে রোদে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাজিফা তুষি

তিন বছর আগে ‘হাওয়া’ সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নতুন এক উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিলেন নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন। দীর্ঘ এই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিনি এই বার আছেন তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘রইদ’ নিয়ে। সম্প্রতি সিনেমাটির পোস্টার এবং ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ট্রেলার প্রকাশের পর থেকে চলচ্চিত্র প্রাঙ্গণে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। পরিচালক জানিয়েছেন, এই সিনেমার গল্পের মূল শেকড় তাঁর শৈশবের স্মৃতি থেকে এসেছে। তাঁর মায়ের মুখে শোনা সাদু, পাগল স্ত্রী এবং একটি তালগাছের গল্পের মধ্যে গড়ে উঠেছে এই লোকজ আখ্যান, যা এখন বড় পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘হাওয়া’ ছিল সমুদ্রের অজাচরতা ও অনিশ্চয়তার গল্প, আর ‘রইদ’ হলো মাটির সুগন্ধে ভরা কৃষিক্ষেত্রের জীবনবিধান।

নির্মাতা এই সিনেমার নির্মাণশৈলীতে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পেরেকদক্ষতা দেখিয়েছেন। গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী পুরো একটি গ্রামই সেট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। শুটিং শুরুর অন্তত ছয় মাস আগে থেকে এই গাছগুলোর যত্ন নেওয়া হচ্ছিল, যাতে দৃশ্যগুলো বাস্তবসম্মত ও প্রামাণ্য লাগে। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতিকে কেবল গল্পের পটভূমি হিসেবে নয়, বরং গল্পের অপরিহার্য অংশ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা।

সিনেমাটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাজিফা তুষিকে। পাগল স্ত্রী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি যে কঠিন পরিশ্রম করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। নাজিফা জানিয়েছেন, চরিত্রের জন্য তিনি টানা ছয় মাস চুলে শ্যাম্পু বা সাবান ব্যবহার করেননি, কেবল পানি দিয়ে গোসল করেছেন। এমনকি ত্বকের পোড়া ভাব ও মেছতা ফুটিয়ে তুলতে তিনি উজ্জ্বল রোদে শর্ষের তেল মেখে দাঁড়িয়েছিলেন। সবচেয়ে কষ্টকর ছিল তাঁর মুখ ও জিব পোড়ানোর জন্য চুন খাওয়া, যার ফলে মুখ ও জিব পুড়ে গিয়েছিল। এই অসাধারণ চরিত্রে নিজেকে পুরোপুরি মিশিয়ে ফেলতে তিনি বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে সাধারণ শ্রমিকদের পোশাক পরেছেন, শুটিংয়ের সময় মাঠে কাজও করেছেন। এই কঠিন যাত্রায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহশিল্পী মোস্তাফিজুর নূর ইমরান।

‘রইদ’ সিনেমা মুক্তির আগেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জন্য এক গৌরবের সংবাদ নিয়ে এসেছে। এটি নেদারল্যান্ডসের ৫৫তম রটারড্যাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘টাইগার কম্পিটিশন’ বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। গল্পের গভীরতা, নির্মাণের দক্ষতা এবং অভিনয়শিল্পীদের অসাধারণ মনোোযোগের জন্য এটি দেশের পাশাপাশি বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ‘হাওয়া’ এর পর মেজবাউর রহমান সুমন ও তার টিমের এই নতুন পরিচিতি দর্শকদের জন্য এক দীর্ঘ অপেক্ষার সফল উত্তর হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন