বৃহস্পতিবার, ১লা জানুয়ারি, ২০২৬ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অকৃত্রিম ভালোবাসায় নেত্রীকে শেষ বিদায়

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আজ বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় এক ঐতিহাসিক ও বিশাল জানাজা শেষে শ্রোতাদের জন্য চিরবিদায় জানানো হয়। লাখ লাখ মানুষের অশ্রুসিক্ত চোখে শেষ বিদায় জানানো হয় এই বরেণ্য নেত্রীকে। এই দিনটি যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পরিণত হয়, যেখানে প্রিয় নেত্রীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং গভীর শোক প্রকাশ পেয়েছে। জানাজায় অংশ নেওয়া সমবেদনা জানাতে আসা হাজারো মানুষকে চোখের অজান্তে কেঁদে ফেলতে দেখা গেছে, তাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে প্রিয় নেত্রীর হারানোর দুঃখে। রাজধানীর সড়কগুলো আজ শোকের মিছিলে ভারি হয়ে উঠেছে, যেখানে দলের পরিচয় ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষজনের মাঝে দেশপ্রেমের আগুন লেগে ছিল। বিএনপি নেত্রীর এই শূন্যতা পূরণ হবে না কেবলই কথায়, এই নেত্রীর অবদান ও সংগ্রাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রায় আড়াই দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা এই নেত্রী, খালেদা জিয়া, দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র রক্ষায় এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরে সংগ্রাম করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন চরম adversity-এ স্বীকার হলেও কখনো ইতিহাসের অপপ্রয়োগের কাছে নতি স্বীকার করেননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের জন্য নিবেদিত হয়ে থাকেন, এক দৃঢ় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নেত্রী হিসেবে। ফ্যাসবাদের জাল ফলে পিষ্ট হয়েও তিনি কখনো নিজের আদর্শ ও জনতার প্রতি অবিচল ছিলেন। আজকের এই শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। এই মহান নেত্রীর শেষ বিদায়ে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা তারেক রহমানসহ দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিদেশি অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন, তারা শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। জানাজার জন্য ভিড়ের কারণে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের চারপাশের এলাকা মানুষের উপচে পড়া সমাবেশে পরিণত হয়। জানাজার আগে মরদেহ লাল-সবুজ পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে জানাজাস্থলে আনা হয়, যা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে মরদেহ শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে নিয়ে যায়, যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। বহির্বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রতিনিধিরা, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এই বিদায় অনুষ্ঠানে। দাফন শেষে শেরেবাংলা নগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখা হয়। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক অধ্যায় শেষে, আজ তিনি তাঁর প্রিয় স্বামী ও নেতা জিয়াউর রহমানের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। এই দুর্দান্ত নেত্রীর মৃত্যু বাংলাদেশের এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করলো, যা চিরকাল স্মরণে থাকবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন