শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

সিলেটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের মদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও তেমুখী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল, সাউণ্ড গ্রেনেড ছুড়ে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছাত্র বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিকাল ৩টা থেকে নগরের আখালিয়ার সুরমা আবাসিক এলাকা ও টুকেরবাজারের তেমুখী থেকে হাজারো শিক্ষার্থী পূর্ব নির্ধারিত গণমিছিল শুরু করে। এ সময় তাদের মিছিল এসে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়া হয়। বাধার মুখে শিক্ষার্থীদের বড় অংশটি আখালিয়া এলাকা দিয়ে চলে যায়কিছু ছাত্র তেমুখী দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুরমা আবাসিক এলাকা, মাউন্ড এডোরা হাসপাতাল এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকলে ওখানে থাকা পুলিশ দল তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সুরমা আবাসিক এলাকা ও মাউন্ড এডোরা হাসপাতালের সামনে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখসহ সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের একাংশ মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ঢোকে। সেখান থেকে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। হ্যান্ড মাইকে তিনি ঘোষণা দেন- যারা হাসপাতালে ঢুকেছে তাদের যেন বের করে দেয়া হয়। নতুবা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় হাসপাতালের কর্মকর্তারা এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। বেশ কিছুক্ষণ ওই এলাকায় পুলিশের অবস্থান ছিল। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তারা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে- পুলিশ শুধু টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়েনি তাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়েছে। পুলিশের ছোড়া ছিটাগুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা। এলাকার লোকজন জানান, প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী তারা ওই এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। এ সময় কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। গোলাগুলির শব্দের কারণে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসাবাড়ির লোকজন প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। মাঝে মধ্যে তারা শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনেছেন। এদিকে, নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায়ও সংঘর্ষ হয়েছে।

আখালিয়ার মাউন্ড এডোরা হাসপাতাল এলাকায় সংঘর্ষের পর মদিনা মার্কেটের অদূরেও হয়েছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে পুলিশ সেখানে টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে এই অবস্থান চলে। এতে করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সড়কে যানবাহন চলেনি। সংঘর্ষের সময় পুলিশ আখালিয়াসহ কয়েকটি এলাকা থেকে অন্তত ৮ জনকে আটক করেছে। এদিকে জুমার পর সিলেট নগরীর ধোপাদীঘিরপাড় এলাকায় সিলেট বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বেরা করা হয়। এতে নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। মিছিলটি ধোপাদীঘিরপাড় এলাকা থেকে বন্দরবাজারে এসে সমাবেশ করে। এ সময় মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এই আন্দোলনে শুধু বিএনপি নয় সাধারণ মানুষও শরিক হয়েছে। ফলে সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। মিছিলে সিলেট বিএনপিসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। মিছিল ও সমাবেশ শেষ হওয়ার পর পুলিশ ওই এলাকায় টহল জোরদার করেছে।

 

পোস্টটি শেয়ার করুন