বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুনাওয়ারার ছবিসহ পোস্টার, প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি

গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচারণার অংশ হিসেবে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের নাগরিকত্ব বাতিল এবং প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়েছে। এই নজিরবিহীন ঘটনায় জনমনে তীব্র আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই একযোগে চালানো হয়েছে এই প্রচারণা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং তাদের কর্মীরা দেশের সর্বত্র, জনসমাগম স্থল, রাস্তাঘাট, অলিগলির দেয়ালে দেয়ালে সাঁটিয়ে দিয়েছে এই বিতর্কিত পোস্টার।

দেয়ালে লাগানো পোস্টারে মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের ছবি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ছবির উপরে মোটা হরফে লেখা, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’। এর নিচেই অত্যন্ত আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক ভাষায় লেখা, ‘সমকামী, ব্যাভিচারকারী, আল্লাহর আইন অমান্যকারী, আল্লাহর গজবপ্রাপ্ত, ইসলামের শত্রু মুনাওয়ারা মুবাশিরিন-এর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দাও, দিতে হবে।’ পোস্টারের নিচে লেখা, ‘প্রচারেঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।’ এই বার্তা স্পষ্টতই ভীতি প্রদর্শন, হুমকি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শামিল।

দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতে ইসলামের এক কর্মী বলেন, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.), আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’ এই বক্তব্য স্পষ্টতই হত্যার হুমকি এবং চরম উগ্রবাদের বহিঃপ্রকাশ।

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম যেভাবে নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। সেই চারজন হলেন আসিফ মহিউদ্দিন, রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা, ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও অনন্য আজাদ। পরবর্তীতে রাজীব হায়দার ও ওয়াশিকুর রহমান বাবু জঙ্গিদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। জঙ্গি হামলার ভয়ে ভীত হয়ে অনেক ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। হেফাজতের এই সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সেই ভয়াবহ অতীতের স্মৃতিকে উস্কে দিচ্ছে এবং জনমনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

এই ঘটনা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। প্রকাশ্যে একজন নাগরিকের ছবিসহ পোস্টার লাগিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া এবং তার ফাঁসি দাবি করা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা দেশে চরম অরাজকতা ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবিলম্বে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে। এই ঘটনা দেশের মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার পরিবেশকে আরও সংকুচিত করবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

পোস্টটি শেয়ার করুন