বুধবার, ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করার দাবি ঢাকা চেম্বার থেকে

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ উল্লেখ করেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং এর পুরো আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার করা। তিনি জানান, বাণিজ্যবিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উন্নতির পাশাপাশি ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ, ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার জন্য একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই আলোচনা মুখ্যত মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলের ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের জনসংখ্যার বিচারে আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এর ফলে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন প্রণীত হলেও বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যদি বাণিজ্য সম্পর্কিত বিরোধগুলো প্রথাগত আদালতের বাইরে সমাধান করা যায়, তাহলে আদালতের চাপ কমে যাবে এবং ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত হবে। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, কম্যাশিয়াল কোর্টের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং আশার কথা, খুব শিগগির এর খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ ও আইনি সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশের আইনি পদ্ধতিতে সংস্কারের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন সঙ্গে কাজ করছে, যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মো. আবদুর রহিম খান উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে বিচারপ্রক্রিয়ার বিলম্বে বৈদেশিক ও স্থানীয় বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা দেশের রপ্তানি ও বাণিজ্যিক অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার, যিনি বললেন, দেশের ও বিদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসায়িক চুক্তির বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। আলোচনায় অংশ নেন বিডা মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা רত্নে, বিআইএকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, রাজারহাট অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজার, বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন, এডভোকেট ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনসহ আরও অনেকে। ডিবিএর সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান মন্তব্য করেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় আরও কার্যকর করতে হবে, অন্যথায় বিনিয়োগ ও উন্নয়নের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, আদালতের পরিবর্তে আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে বিরোধ সমাধান অত্যন্ত জরুরি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা।

পোস্টটি শেয়ার করুন