শনিবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবজির দাম হ্রাস পেলেও অন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে

অবশেষে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু সবজির দাম কমলেও এখনো সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি ফিরেনি। কারণ বেশিরভাগ সবজির দাম এখনও ৮০ টাকার ওপরে রয়েছে। এর পাশাপাশি মাছ, মাংস ও অন্যান্য পণ্যও উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে মৌসুমে ইলিশের দাম আকাশ ছোঁয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মনমরা করে দিয়েছে। আবার ব্রয়লার হাঁস-মুরগির দামও বেড়েছে, যা ক্রেতাদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ডিমের বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দাম কিছুটা কমলেও ক্রেতাদের অনুভূতিতে তা এখনও পর্যাপ্ত নয়।

বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম কমে গেছে, কিন্তু দাম কমের পরিমাণ খুব বেশি নয়। ক্রেতারাও মনে করেন, এখনো অনেক সবজির দাম ৮০ টাকার উপরে, তাই এটি সম্পূর্ণরূপে মানে নেওয়া যাবে না যে বাজারে দাম কমে গেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৪০-১৬০ টাকা, শিম ১৫০-১৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটোল ৭০-১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০-২০০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ২০০-৪০০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে প্রতি লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা, প্রতিটি হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকা, লেবু ২০-৪০ টাকা করে বিক্রি চলছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু সবজির দাম কমেছে, যার মধ্যে থাকছে ভারতীয় টমেটো ২০-৩০ টাকা কমে বর্তমানে ১২০-১৩০ টাকা, চায়না গাজর ২০ টাকা, লম্বা বেগুন ২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০ টাকা, দেশি শসা ২০ টাকা, করলা ২০ টাকা, কাঁকরোল ২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ১০ টাকা, ধুন্দল ২০ টাকা, হাইব্রิด শসার দাম ২০ টাকা কমেছে। এর পাশাপাশি লাউয়ের মূল্য এক গুচ্ছ বা পিসে ২০-৩০ টাকা কমে গেছে। তবে অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মিরপুর ৬ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জসিম জানান, আজ সব ধরনের সবজির দাম কমে গেছে, সেটা গত সপ্তাহের চেয়ে অনেকটাই符। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আসছে সিজনের পরিবর্তনের কারণে দাম আরও কমে যেতে পারে।

অন্যদিকে বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতা তানভীর মাহমুদ বলেন, দাম কমার মানে আসলে খুব বেশি কিছু পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, দাম যদি ১০-২০ টাকা কমে থাকে, সেটাকে তারা সত্যিকার ভাবে কম দাম বলছেন না। তিনি যোগ করেন, এখনও বেশিরভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে, এটাই খুব বেশি মনে হয় না।

ক্রেতা কামরুল হাসান বলেন, সবজি, মাছ, মাংসের দাম সবই বেশি। তিনি বলেন, আমার বেতনের সঙ্গে খরচের ব্যালান্স খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে।

আলু ও পেঁয়াজের বাজারে তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি লাল ও সাদা আলু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। বগুড়ার আলুর দাম বাড়তি হিসেবে কেজিতে পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পেঁয়াজের বাজারে বৃহস্পতিবার আকার ও মানভেদে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট পেঁয়াজ ৭৫ টাকা এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা। লাল ও সাদা আলু একই দরে বিক্রি হচ্ছে, ২৫ টাকা করে। রসুনের দাম ১০০-১২০ টাকা (দেশি), ১৪০-১৫০ টাকা (চায়না), আর আদার দাম ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে মাছ ও মাংসের বাজার এখনো সহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম এখনও উচ্চ। ইলিশ মাছের দাম আকার ও ওজন অনুযায়ী ৭০০ থেকে ২৪০০ টাকা, রুই ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৭০০ টাকা। অন্যান্য মাছের মধ্যে কালিবাউশ ৫০০-৮০০, চিংড়ি ৮০০-১৪০০, কৈ ২৫০, পাবদা ৪০০-৭০০, শিং ৫০০-১২০০, টেংরা ৬০০-১০০০, বেলে ৮০০-১২০০, মেনি ৬০০-১০০০, বোয়াল ৬০০-১২০০ ও রূপচাঁদা ১০০০-১৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গরু ও খাসির মাংসের দামও অপরিবর্তিত থেকে গেছে। এখনো গরুর মাংস ৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার হাঁস-মুরগির দামও বেশি রয়েছে; ব্রয়লার ১৮০-১৯০ টাকা, কক মুরগি ৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-২৯৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা। ডজন ডিমের মধ্যে লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১৫-১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ২০০-২১০ টাকা প্রতি দামে বিক্রি হচ্ছে।

অতিমাত্রায় ডিমের দাম কমেনি, তবে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৭-১০ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম কমেছে ২০-২৫ টাকা। ডজন ডিমের দামও কিছুটা কমে গেছে।

খুচরা মুদি বাজারে পণ্যের দামে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আটার দাম বেড়ে দ্বিগুণ ১০০ গ্রাম সমান ১০ টাকা। বুটের ডালের দাম ৫ টাকা কমেছে, আর খেসারি ডালের দাম ২০ টাকা কমেছে। কেবল কিছু পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫ টাকা, খোলা চাল ৯০-১৩০ টাকা, মসুর ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০৫ টাকা, বড় মুগ ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ১৭০ টাকা, খেসারি ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, মাষকলাই ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৭২, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০-১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১১৫০-১২৫০ টাকা, চিনির প্যাকেট দরে ১১钱 ও খোলার দরে ১০০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য পণ্যের দামে সামান্য পরিবর্তন হলেও বেশিরভাগই অপরিবর্তিত রয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন