নেপালে চলমান গণবিক্ষোভের চাপ বাড়ছে, নিহতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে এখন ৫১ এ দাঁড়িয়েছে। এই নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষ ছাড়াও রয়েছে কঠোর পুলিশ কর্মী ও একজন ভারতীয় নারী। নেপাল পুলিশের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র এবং ডিআইজি বিনোদ ঘিমিরে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিক্ষোভের শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছে অসংখ্য লোক আহত হওয়ার খবর। হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড় বেড়েই চলেছে। কোথাও ৫০০, আবার কোথাও এক হাজারের বেশি আহতের তালিকা উঠে এসেছে। তবে সঠিকসংখ্যা এখনও নিশ্চিতভাবে জানানো সম্ভব হয়নি।
ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা আর অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা যেমন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সংসদ ভবনসহ অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ রাখতে সেনা সদস্যরা টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকজন মন্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হেলিকপ্টার দ্বারা।
শহরজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে কিছু স্থান থেকে গুলির শব্দ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর আসছে। এই পরিস্থিতিতে আরও তদন্তের দাবি উঠছে ও ক্ষতিপূরণের আলাপ চলছে। এছাড়া, বিক্ষোভের কারণে সীমান্তেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ভারত-নেপাল সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পেরোতে কড়া তদারকি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
অভ্যুত্থানের অন্ধকার পাশে রয়েছে বড় ধরনের কারাগার ভাঙচুরের ঘটনা। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৫৭২ জন বন্দি পালিয়ে গেছে। এর পাশাপাশি, তদন্তাধীন মামলার আরও ৫৬০ জন পুলিশ হেফাজত থেকে হারিয়ে গেছে।
এই সহিংসতার ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়েছে। সরকার পরিস্থিতির মোকাবিলায় সংলাপের মাধ্যমে সমাধান ও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নেপালের সেনাবাহিনী জনগণকে গুজব ও ভুল বার্তা থেকে সতর্ক করে বলেছে, তারা নিয়মিতভাবে অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করছে। সবাইকে অনুরোধ করেছ, কোন অসত্য বা বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার।
গেল দুই দিনে চলমান সহিংসতায় সরকারি স্থাপনা ও অবকাঠামোর ক্ষতির মূল্য ২০০ বিলিয়ন (২০,০০০ কোটি) রুপির বেশি বলে ধারণা করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও নথিপত্র অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার জন্য পুনর্নির্মাণে খুবই বড় ব্যয় হবে। এই খাতে প্রয়োজন হবে আরও কয়েকশো বিলিয়ন রুপির বেশি।
আন্দোলনের পেছনে রয়েছে ‘নেপো কিডস’ নামের এক গুচ্ছ বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, বিদেশে ভ্রমণ, দামি গাড়ি ও ফ্যাশনের ছবি ভাইরাল হয়ে জনরোষ সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রতিবাদকারী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে, যা আরও দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যকে उजागर করছে।
নেপালের পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত, যে দেশের বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রের নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশের জন্য জনগণ ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে ‘নেপো কিডস’ নামের কিছু ব্যক্তির বিলাসী জীবনযাত্রার ছবি বিপুল সংখ্যক ভাইরাল হয়ে, সাধারণ জনগণের মনে ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিল্পা শ্রেষ্ঠা, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাতিওয়াড়ার ২৯ বছরের তরুণী, যারা একসময় মিস নেপাল ছিলেন, তাদের বিলাসি জীবন ও বিদেশ ভ্রমণের ছবি ভাইরাল হয়ে প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। তার পরিবার ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
আর একজন জনপ্রিয় গায়িকা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ শিবানা, তার বিলাসী জীবন ও দামি পোশাকের ছবি প্রচুর ছড়িয়েছে। একইভাবে, পুষ্প কমল দহলের নাতনি স্মিতা দহলের লাইভ দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ব্যাগের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে।
অন্যদিকে, আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার থাপার ছেলে সৌগত মোটা মোটা পোশাক পরে বিলাস উপভোগের ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছে। সাধারণের দারিদ্র্য ও ক্ষোভের মাঝেই এই নেপো কিডসরা বিলাসপ্রেমে ডুবে থাকছে, যা জনগণের মাঝে আরও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।