বুধবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একদিনে ক্রিপ্টো বাজার থেকে উধাও এক ট্রিলিয়ন ডলার

চীনের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিকভাবে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসায়ী ১৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দ্য ইকোনমিক্স টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসার পর থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাজারের পরিমাণ এক ট্রিলিয়নেরও বেশি ডলার ঝরে গেছে, যা এক রেকর্ড। কয়েনগ্লাসের ২৪ ঘণ্টার তথ্য অনুসারে, এই সময়ে ক্রিপ্টো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিকুইডেশন ইভেন্ট ঘটেছে, যেখানে ১৯ বিলিয়ন ডলার অপ্রত্যাশিতভাবে উধাও হয়ে গেছে এবং এতে প্রভাবিত হয়েছে ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি ট্রেডার। উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর এক ঘণ্টার কম সময়ের ট্রেডিংয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি পজিশন বিক্রি হয়ে যায়। বাজারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর দুপুর ১২:৪২ সময়ে বিটকয়েনের মূল্য ৮.০৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১,১১,৫৪২.৯১ ডলারে, যার মোট বাজারমূলধন ছিল ২.২২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ট্রেডিং ভলিউম ছিল ১৮৩.৮৮ বিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি ইথেরিয়াম মূল্য ১১ শতাংশ পতন করে প্রায় ৩,৮৭৮ ডলারে ট্রেড হচ্ছে। অন্যান্য প্রধান অল্টকয়েন যেমন- এক্সপি, ডজকয়েন, ও কার্ডানো—৩০ শতাংশের ওপরে মূল্যহ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে, যা সাধারণত লিভারেজড ট্রেডের ধস বা অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে করা ট্রেডের ফল বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। কয়েনগ্লাসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি লিভারেজড পজিশন বন্ধ হয়ে গেছে, যা ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বড় লিকুইডेशन ঘটনা। এই সময়ে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ট্রেডারের পজিশন জোরপূর্বক বন্ধ হয়েছে, এর বেশিরভাগই ছিল বিটকয়েন ও ইথেরিয়ামে লং পজিশন। ব্যবসায়ের বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পতন মূলত এক প্রকার জরুরি পরিস্থিতি, যার সঙ্গে চেইনের মৌলিক বিষয় বা অর্থনৈতিক সংকটের সম্পর্ক নেই। বিজনেস অ্যাম ওয়েবসাইটের অনুসারে, ক্রিপ্টো বাজারের ব্র্যান্ড স্ট্রংথ ইনডেক্সের ওপেন ইন্টারেস্ট রাতারাতি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে, যা দ্রুত লিভারেজের অপসারণের সূচক। আফ্রিকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল পারেরা মন্তব্য করেন, ‘এটি ছিল এক ধরনের তরলতা-চালিত রিসেট, বিক্রির বিষয়কে যান্ত্রিক বলা যায়। এটি ব্লকচেইনের মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্ক ছিল না এবং এটি ম্যাক্রো প্যানিকের ফল নয়।’ ইনভেস্কোর ইটিএফ প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান ক্রিস মেলর বলেন, ‘এটি অযৌক্তিক আচরণ ছিল না। বিটকয়েন এখন উচ্চ-ব্যাটা অর্থনীতি বা ম্যাক্রো অ্যাসেটের মতো আচরণ করছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকেতের প্রতিক্রিয়া। এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য সংকেত, অপূর্ণতা নয়।’ ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। এর ফলে শেয়ার বাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীর আগ্রহ কমে যাওয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন