শুক্রবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বহু অঞ্চলে সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে: ভয়াবহ সীমান্ত যুদ্ধের সম্ভাবনা

দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে আবার দেখা দিয়েছে বড় আকারের যুদ্ধের আশঙ্কা। গত শনিবার রাতে আফগান বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে তালেবান সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি এই অঞ্চলে আরও ব্যাপক এবং অবিশ্বাস্য মাত্রার সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর আকার ধারণ করতে পারে। বুধবার ও শনিবারের ধারাবাহিক সংঘর্ষের পরে উভয় পক্ষই একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংসের অভিযোগ করছে। পাকিস্তান তার বিমান বাহিনী দিয়ে কাবুল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাকটিকা প্রদেশের উপর বিমান হামলা চালিয়েছে, যার জবাবে আফগান বাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে অনেক পাকিস্তানি সেনার মৃত্যুর দাবি জানিয়েছে। তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, একসময় পাকিস্তান আফগানিস্তানে তালেবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, কিন্তু বর্তমানে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে প্রথম তালেবান শাসনের সময় পাকিস্তান তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সংঘর্ষ যদি বাড়তে থাকে, তাহলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও বিপুল ক্ষতি করতে পারে। এই দীর্ঘ সীমান্তে নিয়মিত লড়াই চলায় কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো জটিল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান আশ্রয় দিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি), যার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু পাকিস্তানি সেনা ও নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামাবাদ বলছে, তাদের শত্রু ভারতের সহায়তায় এই সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা কেবল দুই দেশ নয়, গোটা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করবে। ইতোমধ্যে এই পরিস্থিতি দু’দেশের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান রপ্তানি অংশীদার এবং বহু বছর ধরে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। তবে এই সংঘর্ষের কারণে সীমান্তের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ করা হয়েছে এবং শত্রুতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার আফগানকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও দ্রুততর করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসতেন, এই সংঘাত দ্রুত শেষ করতে পারতেন এবং জীবন রক্ষা করতে পারতেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র লিন জিয়ান জানিয়েছেন, উভয় দেশের মধ্যে সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তারা আশাবাদী। বেইজিং উল্লেখ করেছে, তারা পাকিস্তান-আফগান সম্পর্কের উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায়। অন্যদিকে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে, যেখানে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন সোহাইল আফ্রিদি। সোমবার প্রাদেশিক পরিষদ অধিবেশনে স্পিকার বাবর সালিম সওয়াতি তাকে নির্বাচিত ঘোষনা করেন। এই নির্বাচনে ৯০ ভোট পেয়ে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তবে বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বয়কট করেছে এবং তার কর্মকাণ্ডকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বিরোধী নেতা ড. ইবাদুল্লাহ বলেছেন, যখন আলি আমিন গান্ধাপুর তখনো মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন এই নির্বাচন বাতিল হওয়া উচিত। অন্যদিকে, বহিষ্কৃত মুখ্যমন্ত্রী গাণ্ডাপুর এটিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিচায়ক হিসেবে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তিনি তার দলের নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন এবং দেশের শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন