গাজা ইস্যুতে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সম্প্রতি আদিষ্ট শান্তিচুক্তির পর এখনও বেশ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ দিক উঠে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্র করে গাজা থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, হামাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, প্রয়োজনে ‘সহিংস’ উপায় অবলম্বনও করা হবে, যদি তারা অস্ত্র নামাতে অস্বীকৃতি জানায়। ট্রাম্প বলেন, ‘যদি তারা অস্ত্র না নামায়, আমাদের তরফ থেকে দ্রুতই তাদের নিরস্ত্র করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা আর বেশি দেরি হবে না, আর অবশ্যই সহিংসভাবে হলেও।’ তিনি যোগ করেন, এটি ‘যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে’ সম্পন্ন হতে হবে। এই সপ্তাহে গাজায় ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চালু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, হামাসকে কিভাবে নিরস্ত্র করে তাদের গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা যাবে, বিশেষ করে তখন যখন দ্বিতীয় দফার শান্তিচুক্তি কার্যকর হচ্ছে। ট্রাম্পের পূর্বের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, হয়তো গাজায় হামাসকে সীমিত পর্যায়ে রাখতে দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের উচ্চ পর্যায়ের দূতরা সরাসরি হামাসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা একান্তভাবে দুপক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এর আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, স্বল্পমেয়াদে হামাসকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কিছু সীমিত ভূমিকা নিতে দেওয়া হতে পারে। তবে এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে পুনরায় সংঘাতে জড়ানো থেকে ইসরায়েল ও হামাসকে বিরত রাখা সম্ভব হবে। গত মঙ্গলবার একটি ভিডিও প্রকাশ করে হামাস দেখানো হয়েছে, যেখানে তারা আটজন চোখ বাঁধা, হাটুড় বাঁধা ও হাঁটু গেড়ে বসা ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য হামাস ওই ব্যক্তিদের ‘অপরাধী ও সমাজবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে গুলিতে হত্যা করার ঘোষণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর হামাস গাজায় ‘ফিলিস্তিনি অপরাধী চক্র ও গোষ্ঠীগুলোর’ বিরুদ্ধে নতুন অভিযান শুরু করেছে। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বক্তব্যে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর আগে হামাসকে কিছুটা সীমিতভাবে নিরাপত্তা রক্ষার অংশীদার করে তোলা হবে। যদিও তার ২০ দফা শান্তিচুক্তির মধ্যে স্পষ্ট করা হয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্র হতে ও গাজা দখলের লক্ষ্যে সমাপ্তি নির্দেশ দিতে। ট্রাম্প বলেন, ‘হামাস এখনও টিকে আছে কারণ তারা সমস্যার সমাধান চায়। তারা স্পষ্ট বলেছে, তারা শান্তিতে থাকতে চায়। আমরা তাদের জন্য কিছু সময়ের অনুমতি দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, গাজা পুনর্গঠন একটি কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ; এজন্য মাঠপর্যায়ের শক্তিগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করতে হবে। মিসরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের শান্তিচুক্তি আমাদের দৃষ্টিতে শুরু হয়ে গেছে। তবে কিছু অংশ ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে।’ ট্রাম্প যোগ করেন, ‘গাজা এখনো পরিষ্কার করতে হবে—অনেক কিছু হাতে নিতে হবে।’ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে হামাস নেতাদের বৈঠকের পরে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে কুশনার ব্যক্তিগতভাবে হামাসকে আশ্বাস দেন যে, শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে পুনরায় সংঘাতের পথে যেতে বাধা দেবেন। এছাড়াও, গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে হামাসের রাজনৈতিক নেতা খালিল আল-হায়া উপস্থিত ছিলেন, যিনি সম্প্রতি দোহায় ইসরায়েলি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই বৈঠক ছিল হোয়াইট হাউস ও হামাসের মধ্যে প্রথম বৈঠক যা মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মি বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহলারের দোহার বৈঠকের পরে আর হয়নি। ঐ সময় তিনি মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মি এডান আলেকজান্ডার ও অন্য চার মার্কিন নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার কাজ চালাচ্ছিলেন। বৈঠকে উইটকফ হামাসকে বলেন, ‘জিম্মিরা এখন আপনাদের জন্য বোঝা, তাদের এখনই মুক্তি দিতে হবে।’ সংবাদমাধ্যম সূত্র জানায়, উইটকফ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্তা হলো—আপনাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে এবং তিনি তার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রতিটি দফা বাস্তবায়ন করবেন।’ এই সরাসরি বৈঠক ছিল শান্তিচুক্তির জন্য মূল চাবিকাঠি। এর পরে মিসর, তুরস্ক ও কাতারের গোয়েন্দা নেতারা আলাদাভাবে হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং পরে তারা জানায়, ‘আমরা একমত হয়েছি যে, এই বৈঠকটি চুক্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।’ এই আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ পরিষ্কার হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
