শুক্রবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ঝুঁকির মুখে

গাজায় কার্যকর হওয়া ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি এটাই প্রথম পরীক্ষা Facing কঠোর চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাস জিম্মিদের মরদেহ ফেরাতে বিলম্ব হওয়ার কারণে গাজায় ত্রাণপ্রবাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে এবং মিসরের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংও পরিকল্পনা অনুযায়ী খোলা হবে না। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে হামাস চারজন জিম্মির মরদেহ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আটজনের মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে, তবে এখনও আরও ২০ জনের মরদেহের সন্ধান মেলেনি। হামাস জানিয়েছে, সব কবরের অবস্থান শনাক্ত না হওয়ায় তারা এই কাজে বাধার মুখে পড়েছে। রেডক্রস গত সোমবার সতর্ক করে দিয়েছে, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ, যা কয়েক দিনের বা এমনকি কয়েক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

তবে, ইসরায়েল এই বিলম্বের জন্য হামাসকে ইচ্ছাকৃত উল্লেখ করে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা ঘোষণা করে, গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাওয়া ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা এখন থেকে দিনে ৩০০ এ নামিয়ে আনা হবে, যেখানে আগে ছিল ৬০০। পাশাপাশি, মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিংও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কৃত যুদ্ধবিরতির চুক্তির লঙ্ঘন।

এই চুক্তির মাধ্যমে গত সোমবার হামাস শেষ ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। এর উত্তরসূরীতে, ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেয় এবং গাজার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। তবে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ট্রাম্প হামাসকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অবশিষ্ট মরদেহগুলো দ্রুত ফেরত দেওয়া দরকার, কারণ এটি গাজার পরিস্থিতি এবং পরবর্তী পরিকল্পনা শুরু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “একটি বড় ভার এখন হালকা হয়েছে, কিন্তু কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। মৃতদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হয়নি। এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হচ্ছে।”

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার শুরুতে কিছু অচলের আশঙ্কাও ছিল। হামাস ও ইসরায়েল দুজনই ট্রাম্পের জাতীয় পরিকল্পনার সুবিধা নিতে চেয়েছে। তবে, রাফাহ সীমান্ত খোলার দেরি হওয়া এবং ত্রাণের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত ছিল অপ্রত্যাশিত। গত সপ্তাহে চুক্তিতে বলা হয়েছিল, রাফাহ ক্রসিং গেট বুধবার থেকে খুলে দেওয়া হবে এবং মার্চের স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির মতোই পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ থাকবে।

ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ ও বহির্গমনপথ বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ অনেকটাই বন্ধ হয়ে পড়ে, বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও দেখা দেয়। যুদ্ধবিরতির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি (জীবিত বা মৃত) ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও, তা না হলে হামাসকে মৃত জিম্মিদের তথ্য দিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

অপরদিকে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ও সোমবারের স্বাগত উদযাপনের পর মঙ্গলবার গাজা জুড়ে আবারও উত্তেজনা বেড়ে যায়। শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী কিছু এলাকা থেকে সরে গেলেও নানা উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার মধ্যে তারা নতুন পরিস্থিতিতে এসে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালায়, যার ফলে ছয়জনের মৃত্যু হয়। যুদ্ধবিরতির সময়ে ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ ও বাহিরের পথ বন্ধ রাখায় খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানান, শুজাইয়া এলাকায় ড্রোন হামলায় পাঁচজন এবং খান ইউনিসে একজন নিহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা সতর্ক করার পরও সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা তাদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন, যাদের ‘হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলোর পিছনে রয়েছে হামাসের পুরোনো অস্ত্রভান্ডারের সঙ্গেও সংযোগ।

পোস্টটি শেয়ার করুন