শুক্রবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ পোস্টার, টি-শার্ট ও ফেসবুক পোস্টে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

সম্প্রতি ভারতজুড়ে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ এই শান্তিপূর্ণ শ্লোগানকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। মূলত এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এক অবাধ ও স্বাভাবিক উপায় হিসেবে দেখা হলেও, দেশীয় কর্তৃপক্ষ এই স্লোগানটিকে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য হুমকি হিসাবে অভিহিত করেছে। এর ফলে, দেশজুড়ে ৪ হাজারের বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের কানপুরে মুসলিমরা ঈদে-মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ লেখা একটি বিলবোর্ড স্থাপন করেন। এটি ‘আই লাভ নিউইয়র্ক’ সাইনবোর্ডের অনুকরণে তৈরি হয়েছিল। 그러나 স্থানীয় কিছু হিন্দু এই বিলবোর্ডের ওপর আপত্তি জানান। পরবর্তীতে পুলিশ ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে দুই ডজনের বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে মুসলিমরা কানপুরের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ শুরু করে। উত্তর প্রদেশের বেরিলি, গুজরাটের গোধরা, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই ও তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদসহ নানা জেলায় এই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদকারীরা ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ লেখা পোস্টার, টি-শার্ট পরিধান এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নিজেদের প্রতিবাদ প্রকাশ করে। এই আন্দোলনের জের ধরে পুলিশ ৪ হাজার ৫০০-এর বেশি মুসলিমের বিরুদ্ধে মামলা দাখিল করে এবং প্রায় ২৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এছাড়া, উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মাওলানা তৌকিরের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গুজরাটের গোধরায় ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ পোস্টার শেয়ার করার অভিযোগে যুবক জাকির ঝাবাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করলেও, ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ শ্লোগানকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা ও গ্রেপ্তারি দেশের মূলনীতির ওপর প্রশ্ন তোলে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আকার প্যাটেল বলেন, ‘এ ধরনের শ্লোগান শান্তিপূর্ণ এবং কোনও উসকানি বা হুমকি ছাড়াই প্রকাশিত হয়। তাই এর জন্য ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়।’

পোস্টটি শেয়ার করুন