মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি ও প্রভাব: বাংলাদেশের রক মিউজিকের কিংবদন্তি

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক অপ্রতুল শূন্যতা সৃষ্টি করেছেন প্রয়াত রকের জাদুকর, গিটার maestro ও সংগীত পরিচালক আইয়ুব বাচ্চু। তিনি শুধু একজন ব্যান্ড ও রক সংগীতের কিংবদন্তি ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক মহাগ্রন্থের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজ (১৮ অক্টোবর) তার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার প্রয়াণের পর থেকে এই শূন্যতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি, কারণ তিনি ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা, যা কোন দিন পূরণ হওয়ার নয়। তার আত্মার শান্তির জন্য আমরা প্রার্থনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। তার প্রতি আমাদের এই শ্রদ্ধাঞ্জলি কখনো শেষ হবে না।

আমার ব্যক্তিগত পরিচয় তার সঙ্গে প্রথম ঘটে ২০১০ সালে, যখন আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তিতে আয়োজন করেছিলাম ‘বিজয়ের কনসার্ট’। এই কনসার্টের মাধ্যমে আমি প্রথমবার তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছি। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডদল এলআরবি, রকস্টার, মিলা, নির্ঝর এবং চট্টগ্রামের অপু এই কনসার্টে অংশ নেন। প্রায় ৫০,০০০ দর্শক উপস্থিত ছিল এই মহা অনুষ্ঠানটিতে।

এই কনসার্ট আয়োজনের পেছনে ছিল এক দৃঢ় সংকল্প, যার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছিল অপরিহার্য। আমি বিশেষভাবে স্মরণ করি তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নানকে, যিনি পরবর্তীতে সচিব হিসেবে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের দক্ষতা ও উৎসাহ ছাড়া এই আয়োজন অসম্ভব ছিল। এছাড়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংবাদমাধ্যমকর্মীরা, বন্ধু-বান্ধব ও প্রবাসী ইভেন্ট পার্টনাররা একযোগে কাজ করে এই বিশাল আয়োজনকে সফল করে তুলেছিল।

এরপর একের পর এক বিজয়ের মাসে একই ধরণের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশ নেন আইয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ড এলআরবি, দলছুট ও হৃদয় খান। এই দুটো কনসার্ট এখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর হৃদয়ে অম্লান হয়ে আছে। এই সব অনুষ্ঠান সফলতার পেছনে মূল অবদান ছিল বাচ্চু ভাইয়ের সহযোগিতা ও প্রেরণা। তার সহায়তা ছাড়া জেলা শহরে টিকেটবিহীন ওপেন-এয়ার কনসার্টের সাহস পাওয়া সম্ভব হত না। আমি তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

আজ ১৮ অক্টোবর, সেই অসাধারণ সংগীতজ্ঞ ও গুণী ব্যক্তিত্ব বাচ্চু ভাইয়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার স্মরণে প্রতি বছর মগবাজারের একটি কনভেনশন সেন্টারে স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণের আয়োজন করে থাকেন তার প্রগতিশীল সহকর্মীরা। আমি নিজেও এতে অংশগ্রহণ করে গর্ব অনুভব করি। তার স্ত্রী প্রিয় চন্দনা ভাবী আজও তাঁর স্মৃতিকে ধরে রেখে অসংখ্য মানুষের মতোই ভালোবাসায় মোড়ালেন।

বাচ্চু ভাই ছিলেন আকাশের মতো বিশাল ও সমুদ্রের মতো গভীর একজন শিল্পী। দেশের সংগীতের জগতে তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি বারবার দাবি করছি, তার নামে চালু হোক ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য স্বীকৃতি। আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এই উদ্যোগের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।

একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বলতে চাই, আইয়ুব বাচ্চু ভাই অনেক তরুণ বয়সে চলে গেছেন। দেশের সংগীতের জন্য আরও অনেক দিন বেঁচে থাকাই তাঁর একান্ত আহ্বান। সব শিল্পীরই উচিত নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতন করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেওয়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা এবং দৈনিক ৪০ মিনিট হাঁটা। এই সতর্কতাই আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে। আমাদের এই সুস্বাস্থ্য বজায়ে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সবসময় আপনার পাশে থাকবে—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

শেষে একটাই কথাই বলা যায়, আইয়ুব বাচ্চু ভাই কোটি হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন, রূপালী গিটারের সীমানায় ছড়িয়ে থাকা তার ছয়টি তারের মতো। তার স্মৃতি আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ, যা চিরদিন অম্লান থাকবে।

লেখক: ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পোস্টটি শেয়ার করুন