শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ৩৬ প্রস্তাব

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শেষে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, পরবর্তী নির্বাচন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং আইন-শৃঙ্খলার উদ্বেগ কেটে যাবে। ড. আবদুল মঈন খান জানান, ‘বিগত তিন নির্বাচন, নির্বাচন বলে কিছু ছিল না। গত ১৫ বছরে যাদের চরিত্র হনন করেছি, তারা বিগত ১৫ মাসের মধ্যে বদলে যাবে—এটা আশার ব্যাপার নয়। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এসব বিষয়ে।’ বিএনপির প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্ব দেন ড. আবদুল মঈন খান, প্রায় দেড় ঘণ্টা সভা করে সিইসির সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলের অন্যান্য সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া। প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলো নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

১. অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

২. মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুনর্বিন্যাস করে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বুঝতে অসুবিধা না হয়।

৩. বিগত নির্বাচনের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের নির্বাচনী দায়িত্বে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।

৪. রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে, যেখানে বাংলাদেশের নিজস্ব নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য ব্যবহার করা হবে।

৫. ভোটের প্রক্রিয়াজুড়ে সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সামরিক সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ও তাদের মোতায়েন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে।

৬. নির্বাচনের আগে ও সময়কালীন অনিয়ম রোধের জন্য কমিশনের নিজস্ব ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

৭. ভোটারদের ভোট প্রদানকে স্বচ্ছ ও নিরাপদ করে তোলার জন্য ভোটকক্ষের বাইরে ক্যামেরা স্থাপনসহ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র চালু করে সময়মতো অভিযোগ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করে নির্বাচনের জন্য তড়িঘড়ি নতুন নির্দেশনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে।

১০. নির্বাচনকালীন সময়ে পোলিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারদের নিয়োগে অপ্রিয় কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে।

১১. রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে অংশগ্রহণে কোনও বাধা না হয়।

১২. অস্ত্র মালিকানার পদ্ধতি ও জমা দেওয়ার সময়সীমা নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. অবৈধ অস্ত্র ও চোরাচালান বন্ধে তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে।

১৪. সীমান্তে অবৈধ অস্ত্র ও চোরাচালানের উপায় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১৫. সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নিয়োগগুলো বাতিল করতে হবে।

১৬. অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে মনোযোগ দিতে হবে।

১৭. কারচুপি প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি ও ফলাফলের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।

১৮. অর্থবহ প্রভাব, পেশিশক্তি ও অর্থের অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৯. নির্বাচনী প্রচারণায় বহিরাগত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ আটকে দিতে হবে।

২০. নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

২১. নির্বাচন সুসমভাবে সম্পন্ন হওয়া প্রমাণিত করে দেশবাসীর চোখে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।

২২. নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সকল ভোটারের মধ্যে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

২৩. কোনও দল বা প্রার্থী বিভ্রান্তিকর বক্তব্য বা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারবে না, তার জন্য অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

২৪. ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে এমন অপপ্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

২৫. ধর্মীয় প্রলোভন ও ভয়ভীতি দিয়ে ভোটার প্রভাবিতের অপচেষ্টা রোধ করতে হবে।

২৬. অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

27. ভোটের জন্য কেন্দ্রে যাওয়ার পথ যতটা সম্ভব সহজ করে, ছোট দোরগোড়ায় ভোট কেন্দ্রে আনা নিশ্চিত করতে হবে।

28. ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে যথেষ্ট প্রচার চালাতে হবে।

29. সকল নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের গাফিলতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

30. ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে কিংবা বাইরে যেকোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

31. নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের তাদের নিজস্ব জেলার অধীনেই দায়িত্ব পালন করতে হবে, দলীয় বা মতাদর্শভিত্তিক পর্যবেক্ষণে বাধা দিতে হবে।

32. আনসার ও ভিডিপির মোতায়েন নিজ জেলায় অনুমোদিত নয়।

33. কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ বা মোতায়েনও নিষিদ্ধ।

34. ভোটার তালিকা, ভোটের দিন ব্যবহৃত পোলিং এজেন্টের তালিকা সময়মতো সরবরাহ করতে হবে।

35. ভোট গণনা শেষে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে দ্রুত ফলাফল ঘোষণা নিশ্চিত করতে হবে।

36. প্রবাসীতে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কার্যকর স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে এবং রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা যথাসময়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরবরাহ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, যদিও পরে ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো লিখিত প্রস্তাব দেননি। তবে বিএনপির এই নেতার হাতে ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে করণীয় প্রস্তাবসমূহ নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত কার্যপত্র’ শীর্ষক একটি দলিল দেখা গেছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন