মঞ্চ থেকে ছোট পর্দা দিয়ে শুরু করে এখন বড় পর্দায় প্রবেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মিষ্টি ঘোষ। কিশোরগঞ্জের এক সাধারণ পরিবারের মেয়ে তিনি। তার প্রথম পদচারণা ছিল একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে, যেখানে তিনি বিভিন্ন গ্রামীণ ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে পারদর্শী হয়েছিলেন। মা এর নির্দেশে তিনি ছোট থেকেই নাচ-গান ও তবলার তালিম নিয়েছিলেন। মঞ্চ তার জন্য ছিল ঘরোয়া জায়গা, যেখানে তিনি ‘মহুয়া’, ‘সোনাই মাধব’, ‘চণ্ডালিকা’র মতো বহু নাট্যনাট্য ও নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন। তার বিশ্বাস, নাচই তাকে অভিনয় বুঝতে শিখিয়েছে।
২০১৬ সালে স্থানীয় একতা নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। এর পর ঢাকায় এসে শিল্পকলার মঞ্চে হুমায়ূন আহমেদের ‘১৯৭১’ নাটকের ‘মালা’ চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি হিসাববিজ্ঞানে পরিতৃপ্ত অধ্যয়ন করেন, যেখানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে ঢাকার একটি ফ্যাশন হাউসে কাজ করছেন, তবে অভিনয়ে পুরো মনোযোগ দেয়ায় চাকরি ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।
মিষ্টির জীবনের সবচেয়ে বড় মোড় ছিল স্টার হান্ট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অডিশনের জন্য তিনি টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে অডিশন দেন, যেখানে তার আত্মবিশ্বাস ছিল, কিন্তু জিতে যাওয়ার ব্যাপারে আশাও করেননি। তবে এক অসুস্থতার কারণে একবার বাদ পড়লেও বিচারকদের বিশেষ দৃষ্টিতে ফেরানো হয় এবং তিনি স্বশরীরে চ্যাম্পিয়ন হন। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার জীবনই বদলে যায়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি তিনি ‘খুশবু’ ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান, যা তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
২০২৩ সালে তিনি প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ‘ভালোবাসার অলিগলি’ নাটকে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে সাজ্জাদ সুমনের লেখা ও পরিচালিত ‘খুশবু’ নাটকটি। এই গল্প গ্রামীণ মেয়ের শহরে এসে টিকে থাকার সংগ্রামের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। মিষ্টির মতে, এই চরিত্রটি তার নিজের গল্পের সাথে মেলে — তিনি বলেন, “খুশবু যেমন বাবার বাধ্য মেয়ে, তেমনি নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করে। আমার চরিত্রটার সঙ্গে আমার বেশ মিল আছে।” নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু, ইন্তেখাব দিনার, গাজী রাকায়েত, নাজিয়া হক অর্ষা ও অন্যরা। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা বলছেন, ক্যামেরার চরিত্রে অভিনয় আরও চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি উপভোগ করেন তিনি।
‘খুশবু’ প্রচার পাওয়া শুরু থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় উঠে আসে মিষ্টি ঘোষের নাম। দর্শকদের ভালোবাসা ও প্রশংসা তাকে অনুপ্রাণিত করছে। তিনি বলেন, “মানুষের ভালোবাসা পাওয়া সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি… এই ভালোবাসাই আমার আসল শক্তির উৎস।”
অভিনয় জগতে তার আদর্শ দেখেন বিপাশা হায়াত ও শমী কায়সার, এবং প্রেরণার উৎস মেহজাবীন চৌধুরী। তিনি বেশ প্রত্যয়ী, ‘নামমাত্র নায়িকা’ হিসেবে থাকতে চান না; বরং চান অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে। তার স্বপ্ন জুড়ে রয়েছে ওপার বাংলার অভিনেত্রী জাহিদ হাসানের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা।
হুমায়ূন আহমেদের নাটক বা সিনেমায় অভিনয়ের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় এখন তার নজর আলাদা। সম্প্রতি জানা গেছে, তিনি ‘সোলজার’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। এই ছবিতে বড় পর্দায় তিনি শাকিব খানের সঙ্গে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এই অগ্রহণযোগ্য বিষয়টি নিয়ে তিনি আপতত মুখ খুলছেন না। হাসিমুখে তিনি শুধু বললেন, “এমন সুযোগ আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। বড় পর্দায় কাজ করাটা সব অভিনেতারই স্বপ্ন।”





