পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় তাসনিয়া ফারিণের অভিষেক ঘটে ‘আরও এক পৃথিবী’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর তিনি দেবের সঙ্গে অভিনয় করার কথা ছিলেন ‘প্রজাপ্রতি ২’ সিনেমায়, তবে ভিসা জটিলতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে কলকাতা গেছেন তিনি, যেখানে গত শুক্রবার তিনি ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর পারিবারিক বন্ধু চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর ভবিষ্যত প্রকল্পে কাজের সম্ভাবনা রয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে তিনি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দিক, নারীর কেন্দ্রীয় ছবির অবস্থা এবং বাংলাদেশের বিনোদন জগৎ নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন।
অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি এখনও নিশ্চিত না যে আমি অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরের সিনেমায় থাকব কি না। তবে তিনি সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি বহু দিন ধরেই আগ্রহী। চঞ্চলদা এই প্রজেক্টে থাকছেন কি না, তা আমি নিশ্চিত নই।’ এর আগে তিনি জয়া আহসানের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন এবং বলেন, ‘আমি জয়া আপুর অভিনয় দেখেছি তাঁর বাড়িতেই। খুব স্পর্শকাতর এবং যত্নের সঙ্গে তিনি তার ক্যামেরায় ধরেছেন প্রতিটি দৃশ্য।’
ভিসা জটিলতার কারণে দেবের নায়িকা হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে ফারিণ বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক, তবে আমি কোনো অভিযোগ করছি না। ওরা আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিল। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। তবে দেনার মতো দেবের সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছিল এবং উনি বললেন, ‘অবশেষে দেখা হলো, খুব খুশি লাগছে।’ এর আগে তাদের ফোনে যোগাযোগ ছিল, এখন মুখোমুখি দেখা হলো।’
কলকাতা ও বাংলাদেশের শিল্পীরা একে অপরের মাধ্যমে কাজ করছে, যা প্রসারিত হচ্ছে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করছে। ফারিণ বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, আমার সঙ্গেতো এমন কিছুর কথা হয়নি। কেউ কারও জায়গা দখল করতে পারে না। যদি দখল করতে হতো, তাহলে আমাকে ওপার বাংলার কাজের জন্য এখানে আসতে হতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের শিল্পীরা কলকাতার ছবিতে কাজ করছেন এবং ভারতের শিল্পীরাও বাংলাদেশে আসছেন। এই আন্তঃসংযোগ আমাদের জন্য খুবই দরকার। আমরা একে অন্যের কাজের মাধ্যমে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারি।’
পরবর্তী সময়ে তিনি নারীদের পারিশ্রমিকের বিষয়ে মত প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২৫ সালে নারীর অবস্থা কতটা বদলেছে বলে মনে হয়? আমি তো নিজের চোখে তেমন পরিবর্তন দেখি না। আমাদের লড়াই এখনো চলছে। অনেক নারীকেন্দ্রিক সিনেমা তৈরি হলেও সেগুলোর গল্প এখনো ক্লিশে এবং সীমিত। নারীর সংগ্রাম ও অধিকার তুলে ধরণের ছবি অপ্রতুল এবং যদি ব্যবসায় ভালো ফল না হয়, তখন দোষ এসে পড়ে নারীকেন্দ্রিক ছবির ওপর। তবে পুরুষের ক্ষেত্রেও এ সবের ব্যতিক্রম হয় না। আমি মনে করি, একজন জনপ্রিয় নায়িকা যদি ব্যবসা দেয়, সেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কোয়েল মল্লিকের ‘স্বার্থপর’ সিনেমা, যা এক নারীনির্মিত এক সুন্দর ছবি। এরকম আরও বেশি সাহসী এবং ভালো মানের ছবির প্রয়োজন।’
চরিত্রের প্রয়োজনে অনেক সময় শিল্পীদের সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়। তবে ফারিণের মতে, ‘অকেউ সাহসী দৃশ্যের মানদণ্ড বলে দিন, আমি জানি না।’ হাসি মুখে এ কথাগুলো বললেন।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন ফারিণ। ভুলে ভাবা হয় কি, অভিনয়ে তার প্রভাব পড়ে কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিয়ে আমার অভিনয়ে কোনও প্রভাব ফেলেনি। আমি মনে করি, একজন অভিনেত্রীর বয়সে বিয়ের কোনও নির্ধারিত হার নেই। আমার ব্যাপারে দেখেছি, বিয়ের পরে কাজ আরও বেড়েছে। বিশ্ব এই ট্যাবুক ভেঙেছে বলে আমি খুব খুশি। হলিউড বা আমাদের দেশে এখন আর বিয়ে নিয়ে সমস্যা হয় না।’
তাহসানের সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘সে সব ভুল, আমি অনেকদিন প্রেমের কথা প্রকাশ করিনি। এদিকে আমার ও আমার স্বামীর ছবি দেখুন, মানুষ হঠাৎ তাহসানের নাম জড়িয়ে দিচ্ছে। আমি এখন প্রেমিকের সঙ্গে সব কিছু প্রকাশ্য করেছি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি এড়িয়ে গেছেন। বললেন, ‘আমি রাজনীতি নিয়ে বেশিদিন ভাবি না। আমি বেশি কথা বলতে অপছন্দ করি। তাই এসব বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। মনে করি, একজন শিল্পীর জন্য এই ধরনের জটিল বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।’





