রবিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাহসী দৃশ্যের জন্য কি প্রস্তুত? অভিনেত্রী ফারিণের প্রত্যাশা ও অভিজ্ঞতা

পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা দিয়ে তাসনিয়া ফারিণের বড় পর্দায় অভিনয়ের পথ শুরু হয়। এরপর তার দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপ্রতি ২’ সিনেমায় অভিনয়ের পরিকল্পনা থাকলেও ভিসা জটিলতা তাকে আলাদা করেন। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে তিনি অবশেষে কলকাতা পৌঁছেছেন এবং গত শুক্রবার ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারে উপস্থিত হন। তার_future চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে আলোচনা এবং দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-chânচল চৌধুরীর সঙ্গে তার সম্ভাব্য সহঅভিনয় বিষয়েও কথা বলেন তিনি। এই বিষয়গুলি নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত আলোচনা করেন, যেখানে বিনোদন অঙ্গন, নারীপ্রধান সিনেমা এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গের উপর আলোকপাত করেন।

অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরবর্তী ছবিতে অভিনয় করতে চান বলে জানান ফারিণ, ‘‘আগামী ছবি কি না জানি না, তবে তার সঙ্গে কথাবার্তা অনেক আগে থেকেই চলছিল। আমি কাজের জন্য মুখিয়ে রয়েছি। কিন্তু চঞ্চলদার নাটক বা সিনেমায় থাকবেন কি না, সেটা এখনও জানি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সম্প্রতি কাজের ক্ষেত্রে অনেক প্রশংসিত হয়েছে তাঁর ‘ডিয়ার মা’ সিনেমা, যেখানে জয়া আহসান অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। আমি ও চঞ্চলদা সেটার দেখেছি এবং জয়ার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছি। টোনিদা তাঁর সিনেমায় খুবই সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটির দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন।’’

ভিসা জটিলতার কারণে দেবের সহশিল্পী হওয়ার সুযোগ হয়নি বলে জানিয়ে ফারিণ বলেন, ‘‘আর বলবেন না! তারা আমার জন্য বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করছিল। আমি আসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম, তবে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আমাদের মাঝে দিন দুই আগে ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারে দেখা হলো দীকের সঙ্গে। উনি বললেন, ‘শেষে দেখা হলো, অনেক দিন পর দেখা হল!’ এর আগে ফোনে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। চলতি ছবির প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ এটি।’’

অবদানবোধক শিল্পীরা এখন কলকাতা ও বাংলাদেশে একসঙ্গে কাজ করছেন। তবে সে বিষয়টি কিছু শিল্পীর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে কিনা, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। কোনও শিল্পী অন্যের জায়গা দখল করতে পারে না। যদি পারত, তাহলে আমি অনেক আগে কলকাতা থেকে ডাক পেতাম না। সেই সুযোগ আমাদের দেশের মাধ্যমে আসে। আমাদের কাজের মধ্যে বিনিময় এবং সহযোগিতা দরকার, এতে দুই দেশের প্রগতি হয়। আমাদের চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান বা মোশাররফ করিমও আপনারা কলকাতা সিনেমায় কাজ করছেন। এই পারস্পরিক সহযোগিতা আমাদের জন্য লাভজনক।’’

নারীদের পারিশ্রমিক ও নারীকেন্দ্রিক সিনেমার অবস্থা নিয়েও ফারিণ হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০২৫ সালের মধ্যে যে পরিবর্তন দরকার, তা এখনও পুরোপুরি হয়নি। নারীর অবস্থা আরও উন্নত হওয়া উচিত। আমার নিজের ক্যারিয়ারে আমি দেখেছি, লড়াই করে অ্যাকাউন্টে তুলতে হয়। যদি কোনও নতুন নায়ক দুটো ছবি করে পারিশ্রমিক বাড়িয়ে যায়, তবে সেটা সহজে মান্যতা পায়। কিন্তু নারীরা এর জন্য অনেক সংগ্রাম করে। নারীকেন্দ্রিক ছবিতেও আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা, ক্লিশে বিষয়গুলো হয়। নারী নির্যাতন বা নারীর অধিকার বিষয়ক গল্পে বেশির ভাগ সময় শ্যুট হয়। আমাদের সত্যিকার অর্থে নারীর কাজ, সংগ্রাম ও জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরা হয় না। বেশ কিছু সিনেমা ব্যবসায়িক দিক থেকে তো সফল হয়, কিন্তু সিনেমার বিষয়বস্তু হয় নারীর নতুন ছবি। এই ধরনের ছবি জন্য বাজেট ও গল্পের সমস্যা হয়, বলিউড বা দেশের অন্য প্রেক্ষাপটেও একই পরিস্থিতি। তবে আশার কথা, এমন কিছু ছবি নির্মিত হচ্ছে যেখানে একজন নারী প্রধান চরিত্রের গল্প উঠে আসে, যেমন কোয়েল মল্লিকের ‘স্বার্থপর’ — যা বহু দিন পর একটি মনোরম সিনেমা। একজন নারী পরিচালকের সাহসী উদ্যোগের জন্য তাকে কুর্নিশ, আরো এরকম ছবি আরো নির্মাণের দরকার।’

চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী শিল্পীদের সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়। ফারিণের কি এমন দৃশ্যের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে, প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি, ‘‘কোন দৃশ্য সাহসী? তার মানদণ্ড কী? আমি নিশ্চিত বা স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। এটা আমার জানা নেই, (হাসি)’’

মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন ফারিণ। এটি কি তার অভিনয় ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলে? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের হয়তো মনে হবে, অল্প বয়সে বিয়ে করেও আমি কাজ করেছি। তবে এর মধ্যে কোনও বিরোধ আমি দেখছি না। একজন নায়িকার বিয়ের বয়স বা সময় নির্ধারিত নয়। আমি জানি না, কখন বিবাহের সঠিক সময়, তা আমি ঠিক করে নেব। তবে আমি দেখছি, বিয়ের পর আমার কাজ আরো বেড়েছে।’’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘বিশ্ব এই ট্যাবু ভাঙতে পেরেছে, এখন অন্য দেশে হয়তো আর কেউ এতে ভাবেন না। আগে বিয়ের পর কাজের জন্য সময় পাওয়া কঠিন ছিল, এখন সম্ভব।’’

একসময় তাহসানের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, সে প্রসঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন, ‘‘সেটা সম্পূর্ণ ভুল। আমি অনেক দিন প্রেমের কথা প্রকাশ্যে আনিনি। আমাদের সম্পর্কের সব ছবি তিনি বা আমি প্রকাশ করিনি। হঠাৎ করে তাহসানের নাম জড়িয়ে গেল। তারপর আমি আমার বর্তমান স্বামীর ছবি প্রকাশ করলাম। এতে সবাই বুঝে গেছে যে, সব গুজব ভুল ছিল।’’

অবশেষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি এড়িয়ে যান এবং বলেন, ‘‘আমি রাজনীতি নিয়ে বেশী আলোচনা করতে ভালোবাসি না। আমি সাধারণত খুব বেশি কথা বলতেও কর্তব্য মনে করি না। এই বিষয়ের পক্ষে আমি কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমি মনে করি, একজন শিল্পীর জন্য রাজনীতি নিয়ে বেশি কথা বলা উপযুক্ত নয়।’’

পোস্টটি শেয়ার করুন