শনিবার, ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েল অনুমোদন দিল জেরুজালেমে ১৩০০ নতুন বসতি নির্মাণের

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণে ১৩০০টি নতুন বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের সরকার। এই সিদ্ধান্তটি এই সপ্তাহের শুরুর দিকে সরকারের গুশ এৎজিয়ন বসতি ব্লকের বিশেষ পরিকল্পনা ও নির্মাণ কমিটির unanimously অনুমোদন লাভ করে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরে প্রায় ৪৮,০০০ বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

এই নতুন সিদ্ধান্তটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাক্ষিণ্যমূলক কঠোর বার্তার এক সপ্তাহের মধ্যে নেওয়া হলো, যেখানে তিনি পশ্চিম তীরে অভিযান, জমি দখল ও বসতি স্থাপন বন্ধের জন্য ইসরায়েলকে সতর্ক করে ছিলেন। এর পাশাপাশি, ট্রাম্পের মন্তব্যের একদিন আগে ইসরায়েলি সংসদ নেসেট দখলকৃত পশ্চিম তীর ও মা’লে আদুমিম বাসস্থান ব্লক সংযুক্ত করার জন্য দুটি প্রস্তাবিত আইনের প্রথম অনুমোদন দেয়।

চ্যানেল ১৪ এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণ-পশ্চিমের এলাকা আলন শভুত ও দক্ষিণে অবস্থিত হার হারুসিম এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। এর মধ্যে স্কুল, সরকারি ভবন, পার্ক এবং বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

গুֹশ এৎজিয়ন আঞ্চলিক কাউন্সিল এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেছে, এটি ওই এলাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য অপরিহার্য। তবে, এই পরিকল্পনাকে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছে অনেক জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থা। পিস নাউ বলছে, এই পরিকল্পনা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য ক্ষতিকর এবং পশ্চিম তীর দুটি অংশে বিভক্তির আশঙ্কা বাড়ছে।

বিশ্বসম্মতভাবে, জাতিসংঘ বহুবার ঘোষণা করেছে যে, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ, যা দুই রাষ্ট্রের সমাধান সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে মান্য করার দাবিও উত্থাপন করে আসছে।

অন্যদিকে, গাজায় চলমান সংঘাতে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিমান হামলার ফলে ১০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। হামাস এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছে, এই উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য তারা দায়ী। হামাসের সাফাই, তারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়িত্ব নিচ্ছে না এবং এই ধরনের ভারতীয় ভাষ্য মানে যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হঠাৎ করে আকাশ থেকে হামলা চালানো এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অব্যাহত আক্রমণ নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। গাজায় এখনও হাজার হাজার মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত গাজায় মারা গেছে লক্ষাধিক মানুষ, আহত অগণিত।

বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে না গিয়ে, ইসরায়েল এই চলমান সংঘাতের অব্যাহত রাখতেই বেশি আপোস করছে। এর ফলে, পরিস্থিতি ক্রমে আরও অস্থির হয়ে উঠছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক দিক থেকে এই পরিস্থিতি ঠেকাতে তৎপরতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিষয়টি আরও জটিল হয় যখন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বহু সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-মুনিরাভি ও তার স্ত্রীর নিহত হওয়ার খবর এসেছে। এভাবে, গাজা উপত্যকার সঠিক সত্য তুলে ধরতে অনেক সাংবাদিকের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক সংগঠন ও ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটা সত্য তুলে ধরতে থাকা সাংবাদিকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা, যা স্বাধীন সংবাদ পরিবেশকে হুমকিতে ফেলছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন