মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আরও কঠোর হামলার হুঁশিয়ারি

ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী ও জোরদার হামলার জন্য চিৎকার করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিক এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারজনের মৃত্যু হলেও, এর পরদিনই ইসরায়েল এই ধরনের বার্তা দেয়। ফেব্রুয়ারির নভেম্বরে, ২০২৪ সালে, ইসরায়েল এবং ইরান সমর্থিত সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, এখনও বেশ কিছু অঞ্চল মোটেও শান্ত হয়নি। এখনো ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননে অন্তত পাঁচটি এলাকায় অবস্থান করে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে।

রোববার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছিলেন, হিজবুল্লাহ আগুন দিয়ে খেলছে, আর লেবাননের প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছেন। লেবাননকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র ও দক্ষিণ লেবানন থেকে সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, আমরা আমাদের অভিযান সর্বোচ্চ পর্যায়ে রেখেছি এবং তা আরও জোরদার হবে। আমাদের উত্তর সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা কোনওভাবেই ঝুঁকি হবে না।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে আবার অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, লেবানন সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি মানবে এবং হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করবে। নেতানিয়াহু আরও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি লেবানন নিজেদের প্রতিশ্রুতি না মানে, তাহলে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, লেবাননকে আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তর হতে দেবো না; প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

২০০৬ সাল থেকে চলমান পর্যায়ক্রমে উত্তেজনা ও সংঘাতের জেরে হিজবুল্লাহ গাজা সীমান্তে একের পর এক হামলা চালাতো। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধের পর, ইসরায়েলি সেনারা অভিযান চালিয়ে অনেক শহর ও অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত করে, সাথে সাথে উত্তরের ইসরায়েলবাসীর জীবন বিপর্যস্ত হয়। এরপর প্রায় এক বছর ধরে উত্তেজনা চললেও, সাম্প্রতিক মাসে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে শুরু করে। রাতারাতি, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ ও বিমান হামলা বেড়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি আর্থিক ও সামরিক বাহিনী এক প্রাণঘাতী অভিযানে নামে, যা নিয়ে লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওন সেনাবাহিনীর সদস্যদের এ বিষয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা হলেও, কিছুদিনের মধ্যে ইসরায়েল ও হামলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত শনিবার নাবাতিয়ে জেলায় ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত হয়।

এলাকা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে জানা যায়, ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালিয়ে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যেখানে নিহত ব্যক্তিরা হিজবুল্লাহর রাদওয়ান ইউনিটের সদস্য। এই সদস্যজন অস্ত্র পাচার ও দক্ষিণ লেবাননের সামরিক অবকাঠামো পুনর্গঠনে জড়িত। ইসরায়েলের দাবি, এই হামলার মাধ্যমে তারা নিজের দেশের ও নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলো। তবে, হিজবুল্লাহ বলছে, এই কাজটা তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে গেছে।

হিজবুল্লাহ এতদিন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকার পাশাপাশি, অর্থনৈতিক সত্যতা অনুযায়ী, এখনও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হয়, যা গোষ্ঠীর জন্য বড় ধাক্কা হলেও, তারা অস্ত্র ও সক্ষমতা বজায় রেখেছে।

লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, দেশজুড়ে আর্মি ও নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে পুরো দেশের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতির অবসান আনা যায়।

পোস্টটি শেয়ার করুন