মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কমলনগরে চুরি-ডাকাতি ও অপরাধের বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগজনক

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধের ঘটনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং ও দলবদ্ধ চোরাবৃত্তির কারণে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর শঙ্কা দেখা দিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ।

সূত্র জানায়, উপজেলাটির চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরফলকন, পাটারিরহাট, চরকালকিনি, চরমার্টিন, সাহেবেরহাট ও তোরাবগঞ্জসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ ও অন্যান্য গণ্য অপরাধের ঘটনা ঘটছে। বিগত এক বছরে একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে রয়েছে গণধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, গরু চুরি, বাড়ির মালপত্র লুট ও অন্যান্য সহিংস অপরাধ। বাসা-বাড়ির পানির কল, মোবাইল, শাড়ি-চোপড়সহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস চুরি হচ্ছে। এর ফলে নিরাপত্তাহীনতা আর উদ্বেগ বাড়ছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

বিশেষ করে কিশোর গ্যাং চক্রের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উপজেলায় বর্তমানে ৯টি ইউনিয়নের ৮১টি ওয়ার্ডের অলিগলিতে এই গ্যাংগুলোর আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। গভীর রাতে তারা মানুষের গরু চুরি, বাড়িতে হানা, ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাচ্ছে। পুলিশ চেষ্টা করলেও বেশির ভাগ অপরাধীর শনাক্ত ও গ্রেফতার সম্ভব হচ্ছে না, যা মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে।

অভিযোগ ও তদন্তের পর কিছু ঘটনা ধৃত হলেও অনেক অভিযোগ অধরা রয়ে গেছে। কর্নেলসহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করতে পারলেও সব অপরাধীর সন্ধান এখনও মেলেনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

সাম্প্রতিক কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনায় রয়েছে—২৯ অক্টোবর তোরাবগঞ্জের এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের শিকার, চরবসু এলাকায় পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণ, ফিল্মি স্টাইলে এক তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনা, ডাকাতির সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট, বহুল আলোচিত চরমার্টিনের বটতলী এলাকায় বাসে ডাকাতি, চরফলকনে পরিবারের ১২ জনকে অচেতন করে মালামাল লুট, চরলরেন্সে গরু চুরি, হাজিরহাটে বাড়িতে ডাকাতি, পুলিশি অভিযানে কিছু অপরাধী আটক হলেও অধিকাংশই অধরা থাকছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, চুরি-ডাকাতি ও অপরাধের বাড়বাড়ন্ত দেখে তারা খুবই আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। কিছু মানুষ অভিযোগ করলেও পুলিশ তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে মনে করেন তারা। অনেকের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কমে গেছে। এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে এলাকায় সতর্কতা অবলম্বন করা হলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

অপরদিকে, কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। অভিযোগ পেলে অভিযুক্তরা গ্রেফতার হচ্ছে ও বিচারপ্রার্থী হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, অপরাধের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নত করতে আরো কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন।

পোস্টটি শেয়ার করুন