আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি দুই দফায় ১৪টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রামের দুটি আসন—চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) এবং চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ)—এখনো প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। ফলে এই দুই আসনের প্রার্থী তালিকা আরও সময় নিয়ে চূড়ান্ত হবে বলে দেশবাসীর মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। এই দুই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ ও প্রত্যাশা দেখা দিয়েছে। তারা বিভিন্ন আলোচনা, মতবিনিময় ও সমীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় চট্টগ্রাম নগরীর মোট ১৬টির মধ্যে ১১টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে পরবর্তীতে একজনের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শনিবার (৫ নভেম্বর) আরও চারটি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন দলটির কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, এখন চট্টগ্রামের মোট ১৬ আসনের মধ্যে ১৪টির জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রথম দফায় চট্টগ্রামের ১০টি আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা হলেন: চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) থেকে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) থেকে সরওয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) থেকে কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) থেকে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) থেকে এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) থেকে এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) থেকে সরওয়ার জামাল নিজাম, এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) থেকে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী।
অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চারটি আসনের জন্য নির্বাচিত নাম ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে রয়েছে: চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া)ে আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) থেকে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) থেকে মোস্তফা কামাল পাশা, এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) থেকে নাজমুল মোস্তফা আমিন।
আবার, আবু সুফিয়ানের নাম প্রথম তালিকায় ছিল, কিন্তু ঘোষণার পরে সেটি অজ্ঞাত কারণে প্রত্যাহার করা হয়। এরপরেও তিনি জনসাধারণের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে চলেছেন। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক। এছাড়া, চট্টগ্রাম-৮ আসনে তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দুইবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, রাউজান-৬ আসনে নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তবে এই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন আরও একজন প্রভাবশালী নেতা, গোলাম আকবর খোন্দকার চৌধুরী। ২০১৪ সালে, রাজনীতি বিভাজনের পর থেকে তারা দলীয় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। গত ১৫ মাসে এই দ্বন্দ্বে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেত্রীদের মতে, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
রাউজানের সঙ্গে পাশের রাঙ্গুনিয়া আসনে ইতোমধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন তার ভাতাজা, সালাহউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের। অন্যদিকে, ঢেউ-ডুবির দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের জন্য পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তফা কামাল পাশা, যিনি ইতোমধ্যে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি নাজমুল মোস্তফা আমিন। এ আসনে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের নেতাকর্মীরা ব্যাপক উদ্দীপনায় ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাড়া-মহল্লায় লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও উঠোন সভার মাধ্যমে তারা নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সকল কর্মকাণ্ডে এখন অভূতপূর্ব উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।





