নভেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত এবং অন্তত ৯৬টি ঘটনার মধ্যে আহত হয়েছেন ৮৭৪ জন। পাশাপাশি এই মাসে গণপিটুনী, মব সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৬ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশের ১৫টি প্রধান গণমাধ্যম ও হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সংকলিত তথ্যের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত তথ্যসমূহের ওপর ভিত্তি করে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বর মাসে সহিংসতার পরিমাণ বেড়েছে। এর আগে অক্টোবর মাসে ৬৪টি সহিংসতার ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৫১৩ জন আহত হন। নভেম্বর মাসে বিভাগের মধ্যে বিএনপির অন্তর্গত ৪২টি সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ৫১২ জন এবং নিহত ১০ জন। এছাড়াও বিএনপি-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৫২ জন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে ৪১ জন, অন্য দলের সঙ্গেও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫৫ জন। এ মাসে মোট ২৪টি সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়েছেন ৯১ জন এবং নিহত হয়েছেন ১ জন। এই নিহতের মধ্যে বিএনপি-র ১১ জন ও জেএসএস গ্রুপের ১ জন রয়েছেন।
নভেম্বর মাসে নারী ও কন্যা শিশুর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ১৭৭ জনের। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৪৮ জন, যেখানে ২৫ জন শিশু ও কিশোরী (৫২%) ১৮ বছরের কম। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী ও কন্যা শিশু, এর মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৩৬ জন নারী ও শিশু, যার মধ্যে ১১ জন শিশু। পাশাপাশি যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতায় ২৯ জন নিহত ও ৩২ জন আহত, এবং ২৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।
এছাড়াও নভেম্বর মাসে কমপক্ষে ২৩টি ঘটনার মধ্যে ৩৬ জন সাংবাদিক নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২ জন, হুমকির মুখে পড়েছেন ১১ জন, এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ জন। ২টি মামলায় ২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে পত্রিকান্তরে অন্তত ৭টি মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার এবং ২৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে ভারতের বিএসএফের হামলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আক্রমণে বাংলাদেশি এক জন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন।
সারাদেশে কারাগারে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ৩ জন কারাগারে ও ৯ জন হাজতিতে ছিলেন।
শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় এই মাসে ২৫টি ঘটনার মধ্যে ৪ জন নিহত ও অন্তত ৭৬ জন আহত হয়েছেন। অসুস্থ পরিবেশ ও সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবের কারণে ১৪ শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
ইজাজুল ইসলাম, হিউম্যান রাইটস সাপোর্টের নির্বাহী পরিচালক, বলেন যে অধিকাংশ সহিংসতার কারণ আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশের নামে সহিংসতা, নির্বাচনী প্রার্থীতার জন্য অন্তর্গত কোন্দল, কমিটি গঠন নিয়ে ঝগড়া, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল মূল কারণ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশে কেবল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন চিহ্নিত করে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন।





