ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ইরানের নিরাপত্তা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে। এই ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, যার মধ্যে আল জাজিরা উল্লেখ করেছে যে, গত শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নোবেল কমিটি এ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা নার্গিসের অপ্রয়োজনীয় ও নৃশংস গ্রেপ্তারকে গভীর উদ্বেগের বিষয় মনে করে। কমিটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান, তার অবস্থান স্পষ্ট করে নিশ্চিত করে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শর্তহীনভাবে তাকে মুক্তি দিতে।
নার্গিস মোহাম্মদি ২০২৩ সালে নারী ও মানবাধিকার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা ও ইরানের সংবিধানবিরোধী পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তিনি ২০২১ সাল থেকে তেহরানের এভিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তবে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়ায় তিন সপ্তাহের জন্য তাকে অস্থায়ী মুক্তি দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহে তার অফিসে মৃত অবস্থায় তার আইনজীবী খোসরো আলিকর্দির ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়ার খবর জানানো হয়। এর parasites নেপা, অভিযোগভিত্তিক তদন্তের জন্য নরওয়েভিত্তির ইরান হিউম্যান রাইটস একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, মৃত্যুর চারপাশের পরিস্থিতি বেশ সন্দেহজনক।
এর পাশাপাশি, নার্গিস মোহাম্মদিসহ আরও কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। জানা যায়, তারা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ ও ‘ইরান দীর্ঘজীবী হোক’ শ্লোগান দিয়েছিল।
তার স্বামী তাগি রহমানি বলেন, ‘তারা নার্গিসকে সহিংসভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আইনি প্রক্রিয়া পরিপন্থী এই আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘আইনজীবীর ভাই এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তিনি স্মৃতিসৌধে তার গ্রেপ্তার দেখেছেন।’
নার্গিস মোহাম্মদির অভিযোগ, তিনি ইরানের নীতি ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন, বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর থেকে। তার লেখা টাইম ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইরান ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সকল নাগরিক অধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তার এক বছর ধরে হিজাব পরা, সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এড়ানো, ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বলিষ্ঠ আন্দোলনের কারণেই তাকে বহু বার গ্রেপ্তার ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত, ইরানের শাসকরা তাকে ১৩ বার গ্রেপ্তার করেন, পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করেন, যার মধ্যে ৩১ বছর কারাদণ্ড ও ১৫৪ বেত্রাঘাতের দণ্ড রয়েছে। তার সাহসী ব্যক্তিত্ব ও সংগ্রাম দেশের মানবাধিকার আন্দোলনে এক অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন।





