ফিলিস্তিনের গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিপালন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায় ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দিল যে, গাজার অসহনীয় পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবাধ ও নিরাপদ মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতের পরামর্শের ভিত্তিতে শুক্রবার এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১৩৯টি দেশ প্রস্তাবটি সমর্থন করে। বিপরীতে, শুধুমাত্র ১২টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট প্রদান করেছে, এবং ১৯টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে। প্রস্তাবটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইসরায়েলের গাজায় মানবিক প্রবেশের বাধা দেওয়া কিংবা হামলার পাশাপাশি, সংস্থার স্থাপনায় হামলা বন্ধের দাবি। এসব তথ্য দিয়েছে আলজাজিরা।
নরওয়ের নেতৃত্বে একটি বিশাল আন্তর্জাতিক জোট इस প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উপস্থাপন করে, যেখানে দেখা যায় গাজায় ইসরায়েলি সেনা তৎপরতা বেড়েই চলেছে। তারা ‘হলুদ রেখা’ নামে নতুন সীমান্ত নির্মাণ করছে, যা ক্রমশ গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এর ফলে অসংখ্য গাজাপ্রবাসী নতুন করে বাস্তুচ্যुत হচ্ছে। জাতিসংঘে নরওয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি মেরেট ফেজেল্ড ব্র্যাটেস্টেড সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৪ সাল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অশান্ত বছর এবং ২০২৫ সালও একই ধরনের সহিংসতার পথে। এসবের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। তিনি আরও বলেন, আমরা মানবিক সহায়তার জন্য স্পষ্ট আইনি ভিত্তি চাই।
প্রস্তাবের সদস্যরা ভোটের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফ বার্তোসের দাবি, এই প্রস্তাবটি প্রমাণ করে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কার শান্তিচুক্তির পরও সাধারণ পরিষদ ইসরায়েলকে অজুহাতের ভিত্তিতে টার্গেট করছে।
অন্যদিকে, ইউএনআরডব্লিউ’র কমিশনার ফিলিপ লাজ্জারিনি বলছেন, এই ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে হামাসের অনুপ্রবেশের অভিযোগ অসত্য। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় দু’জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, ফলে মোট নিহতের সংখ্যা বর্তমানে ৭০,৬৫৪ জন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৮৬ জন নিহত ও এক হাজার ১৮ জন আহত হয়েছেন।
গাজায় চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বায়রন’ আঘাত হানোর কারণে ত্রাণ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অক্সফাম সংস্থার মতে, এই ঝড়ের ফলে গাজার সাধারণ মানুষ আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।
অভিযোগ উঠে এসেছে, যুদ্ধের পর অন্তত ১১ বার অর্থাৎ বারবার সেই ‘হলুদ রেখা’ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব গাজা শহরে চলে এসেছে, যেখানে তারা নতুন করে বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে। আশপাশের এলাকা থেকে এসব অস্থায়ী সীমান্ত গড়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পিলার করেছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিষয়েও ইসরায়েল আরও এক ধাপ এগিয়ে ১৯টি অবৈধ বসতি স্থাপনা বৈধ ও প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেন, এসব অবৈধ বসতি কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। বিষয়টি ফিলিস্তিনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
গত মে মাসে ইসরায়েল ২২টি নতুন বসতি স্থাপনের ঘোষণা দেয়, যা গত তিন দশকের মধ্যে বৃহত্তম। আরও তিনটি পৃথক বসতিতে প্রায় ৮০০ নতুন আশ্রয়ণের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।
অতীতের ঠিক একইভাবে, গাজায় ইসরায়েলি হামাসের শীর্ষ কমান্ডার রায়েদ সাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি। তবে, হামাসের পক্ষ থেকে এই মৃত্যুর বিষয়ে কোনও নিশ্চিত তথ্য বা বিবৃতি সরাসরি দেওয়া হয়নি। তারা বলছে, গাজায় একটি বেসামরিক গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির নিয়ম লঙ্ঘন। এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় শুক্রবারে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিহতের মোট সংখ্যা ৭০,৬৫৪ এবং আহতের সংখ্যা ১,১৮০।





