মাগুরা সদর উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামে এক তরুণ শিক্ষক নিজের পছন্দ ও শখের বস্তু হিসেবে গড়ে তুলেছেন এক বিস্ময়কর মিশ্র ফলের বাগান। তিনি হলেন সাদমান সাকির সোহাগ। তার এই উদ্যোগের সফলতা কেবল তাঁর পরিবারকেই নয়, পুরো এলাকার উদ্যোক্তা ও যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণার kaynak হয়ে উঠেছে।
সোহাগ সদর উপজেলার আলাইপুর আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি তার বাবা দেলোয়ার মণ্ডলের রেখে যাওয়া সাতশ শতাংশ জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ফলের এই বাগান গড়ে তুলেছেন। সাধারণত যেখানে শিক্ষকতাই প্রধান জীবিকা, সেখানে তিনি এই ফলবৃদ্ধির কাজে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। তরুণ বয়সে শহরে পাড়ি দিয়ে সফল হওয়ার পরিবর্তে, নিজ গ্রামে থেকে গাছ লাগানোর এই উদ্যোগ নিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
২০২০ সাল থেকে শুরু করে, তিনি নিজস্ব জমিতে বিভিন্ন দেশের এবং দেশি বিভিন্ন ফলের চারা লাগান। এই ফলের মধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির বারোমাসি কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে, সফেদা, কদবেল, ডালিম, আমড়া ও আম। এ ছাড়া, তার বাগানের এক পাশে একত্রে পুকুর কেটে মাছের চাষ শুরু করেছেন। সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ নানা ধরনের মাছ পুষে তিনি উপার্জন বাড়িয়েছেন।
তার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো কমলার চাষ। প্রথমে মাত্র চারশত কমলা গাছের চারা লাগিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন এই বাগানে রয়েছে মোট ১৪০০টির বেশি কমলার গাছ। ফলের মৌসুমে, খরচ বাদে, তার লাভ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। কেজিপ্রতি ১৩০ টাকায় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ শত কেজি কমলা চাষ করে তিনি দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। এ ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তার এই প্রচেষ্টায় আরও ৮-১০ জন যুবক কর্মসংস্থান পাচ্ছেন।
সোহাগ তার বাগানে আধুনিক পানির সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন। এক পাশে ১৪ হাজার ৪ শ ওয়ার্ডের সোলার প্যানেল লাগিয়ে ১১ হর্স পাওয়ারের মোটর চালান, যা আশেপাশের বৃহৎ জমিতে পানির চাহিদা পূরণ করে আরও একটি বেড়া তৈরির কাজ হয়ে উঠেছে।
সোহাগ জানান, ‘শিক্ষকতা আমার পেশা হলেও গাছ লাগানো আমার শখ। এই শখ ও গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি এই ফলবাগান তৈরি করেছি। আমি চাই, আরও তরুণরা নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এগিয়ে আসুক। বাড়ির পাশে নিজের প্রচেষ্টায় ছোট ছোট গাছ লাগালেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব, তবে একইসাথে দেশের যুব সমাজের বেকারত্ব কমতেও এটি সহায়ক।’
কমলার চাষে কাজরত ইকরামুল জানান, প্রতিদিন তারা গাছের যত্ন নেন এবং ফল সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। সোহাগ ভাই তাঁদের জন্য সবসময় মজুরি দেন, যা তাদের সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট। কমলার সুস্বাদু ও রসালো স্বাদে স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কমলা বহনকারী গাড়ির ড্রাইভার জানিয়েছেন, তারা প্রতি বছর সোহাগের বাগান থেকে কমলা নিয়ে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বিক্রি করে থাকেন, এরপর দেশের অন্যান্য জেলাতেও বিক্রির জন্য যান।
মাগুরা সদর উপজেলার নবাগত কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘সাদমান সাকির সোহাগ যুবকদের জন্য উদাহরণ। তার এই ফলবৃদ্ধির উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সাহস দেখানোর জন্য আমরা তাকে স্বাগত জানাই। কৃষি বিভাগ সব সময় এই ধরনের উদ্যোক্তাদের পাশে থাকছে।’





