শুক্রবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের শিশু ও যুবকদের অপহরণ: রিফাতের গ্রেপ্তার

লিবিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি যুবক ও তরুণদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মানবপাচারকারী চক্রের এক সক্রিয় সদস্য রিফাত হোসেন (২৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জানা গেছে, রিফাত মাফিয়া চক্রের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন যুবকদের অপহরণ করে ইতালি যাওয়ার জন্য বাধ্য করতেন।

নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে, গত ৩ নভেম্বর ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে, তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মুহূর্তে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃত রিফাত টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার কামুটিয়া গ্রামে রমজানের ছেলে। পিবিআই সূত্রমতে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে অবৈধ পথে লিবিয়ায় যান রিফাত। সেখানে একটি কফিশপে চাকরি করার সময় স্থানীয় মাফিয়া সদস্য আবদুল্লাহ (লিবিয়ান), মোহাম্মদ (লিবিয়ান) ও তানভীরের (পাকিস্তানি) সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী মো. লিটন হোসেন ওরফে সুজন (২৫) লিবিয়ার একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন।

লিটনের মূল লক্ষ্য ছিল ইতালি যেতে। এই উদ্দেশ্যে সে টাকা জমা করছিল, তখন রিফাত সেই খবর জানতে পারে। ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি, লিটন কর্মস্থলে যাওয়ার সময় একটি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে অপহরণ করে রিফাত ও তার সঙ্গীরা।

অপহরণের পর লিটনকে রিফাতের বাসায় আটকিয়ে হাত-পা বাঁধা ও মারধর করা হয়। এরপর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এই সময়ে রিফাত তার কাছ থেকে প্রায় ৭২ হাজার দিনার (প্রায় ১৫ লাখ টাকা) হাতিয়ে নেয়। এছাড়া, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি শাখার মাধ্যমে অন্য এক ব্যক্তির নামে আরও ৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

অপহরণকারী চক্র লিটনকে ধারাবাহিকভাবে দুই মাস ২০ দিন লিবিয়ায় আটক রেখে আরও টাকা দাবি করে। বাংলাদেশে মামা এসে রিফাতের শ্বশুর-শাশুড়িকে আসামি করে মামলা করলে চাপের মুখে, ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল, ভুক্তভোগী লিটনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পিবিআই সুপার জানান, দীর্ঘ তদন্তের শেষে রিফাতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিফাত বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্রের সঙ্গে মিলেমিশে বাংলাদেশি যুবকদের অপহরণ করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতেন। আসামি ও অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন