ব্রহ্মপুত্র নদে বর্ষাকালीन বন্যা ও ভাঙনের ফলে রৌমারীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বসতবাড়ি ও জরুরি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভুমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়েন এলাকার হাজারো মানুষ। এই সংকট মোকাবেলায় সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য নানা ধরনের সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সহায়তা এবং পরিবারভিত্তিক আয়বর্ধক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩৬০টি পরিবারের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রৌমারী উপজেলার ১২টি চরশোলে মোট ৩৬০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতে রয়েছে শীত ও গ্রীষ্মের মৌসুমে সবজি বীজ সরবরাহ, আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রশিক্ষণ, ভেড়া বিতরণ সহ বিভিন্ন উদ্যোগ। বন্যার সময়েও সবজি উৎপাদন নিশ্চিত রাখতে কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আদা চাষের জন্য বস্তায় চাষপ্রণালী, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও জৈব সার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পরিবারগুলোতে সামাজিক বন্ধন মজবুত করতে পরিবারিক নির্যাতনের বিরোধী সচেতনতা ও আইনি পরামর্শদানেও এগিয়ে এসেছেন সংস্থাটি।
সদ্য দেখা গেছে, চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মিয়ার চরে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন পরিবারের সফলতার গল্প শোনা যাচ্ছে। দুই বন্যাকবলিত পরিবার তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
আছিয়া বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের সহায়তায় তিনি ৪,১০০ টাকার ভেড়া পেয়েছেন, এখন তার কাছে পাঁচটি ভেড়া রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৭,০০০ টাকা।
গোলজার আলী বলেন, “আধুনিক কৃষি ও সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এ বছর ২২,০০০ টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন, যা তার পরিবারের খরচ চালাতে সাহায্য করছে।”
শেফালী বেগম জানান, তিনি কেঁচো সার উৎপাদন প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১,৫০০ টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করেন। অন্যদিকে, আছমা বেগম ২৫টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন, প্রত্যাশা করছেন এক থেকে দেড় কেজি আদা প্রত্যাশিত। স্থানীয় আরও অনেক পরিবার জৈব সার উৎপাদন, সবজি চাষ ও ভেড়া পালন করে পরিবারের আয়ের উৎস বাড়িয়েছে।
আবু হানিফ বলেন, “আমাদের পরিবার এখন আইনি বিষয়ে সচেতন, পরিবারে নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। ফ্রেন্ডশিপের বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ কার্যকরী হয়ে উঠছে।”
এছাড়া, অন্য গ্রামে রয়েছে আরও উন্নতি। যেমন, এছাহাক আলী ও বেলায়েত হোসেন এখন নিজেরাই জৈব সার তৈরী ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এই সব উদ্যোগে চরাঞ্চলের মানুষরা স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন।
ফ্রেন্ডশিপের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, লুক্সেমবার্গের সহায়তায় কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলায় মোট ৮৪০ জন সদস্যের জন্য আয়বর্ধন, সুশাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প চালানো হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “ক্রেডিট সহায়তার পাশাপাশি, কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরেও উদ্যোগ নেবার মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
পাশাপাশি, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় নিশ্চিত করেছেন যে, চরাঞ্চলে ভেড়া পালন অত্যন্ত সুবিধাজনক। এই বছর ফ্রেন্ডশিপের উদ্যোগে ৩৬০ পরিবার ভেড়া পেয়ে তাদের মধ্যে দ্রুত আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে প্রতিটি ভেড়াকে বিনামূল্যে টিকা ও কৃমিনাশক দেওয়া হয়েছে। এতে সহজ খরচে স্বাবলম্বী হওয়া যায় এবং এই উদ্যোগ চরাঞ্চলের মানুষের জন্য লাভজনক হয়ে উঠছে।





