শুষ্ক মৌসুমে কখনো গলা, কখনো কোমর, আবার কখনো বা হাঁটুপানি থেকে ভেসে যায় বমুখালের পানিতে। এই পানি পেরিয়ে জীবনের প্রথম পাঠশালায় যেতে হয় শিশুদের, যা তাদের জন্য একান্তই প্রয়োজন। বর্ষাকালে যখন বৃষ্টির প্রবাহ বাড়ে এবং খালগুলো ভরে উঠে, তখন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে অসুবিধায় পড়েন। লামার বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, এই এক নিরবচ্ছিন্ন সমস্যা। এখানে ব্রিজ না থাকায় ভর্তির আগেই শিশুরা সাঁতার শিখতে বাধ্য হয়, অন্যথায় বিদ্যালয়ে আসা দূর করে ফেলেন অনেক অভিভাবক। শুধু তাদের ক্ষেত্রেই নয়, গজালিয়া উচ্চবিদ্যালয়সহ প্রায় দুইশো শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই খাল পার হয়ে স্কুলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ১৫ নভেম্বর পানিতে ডুবে গিয়েছিল এক শিশু, যা তার সহপাঠীদের চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। যদি এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হতো, তাহলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমত। পাশাপাশি অজস্র মানুষও সহজে চলাচল করতে পারতেন।
পোড়াপোড়ি এলাকাগুলোর মধ্যে বটতলী ইউনিয়নের পশ্চিমে এই খালের দুই পাশে রয়েছে বটতলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭০টি বসতিপূর্ণ পরিবার। অন্য পাড়ায় রয়েছে পূর্ববটতলীপাড়া, তুলাতলী, হামিদচরপাড়া, মুরুংপাড়া, চিন্তাবরপাড়া সহ মোট নয়টি পাড়া, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই খাল পার হয়ে কৃষিপণ্য বাজারে যায়, যা বটতলী-গজালিয়া বাজারের ব্যবসায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটায়। এতে করে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন।
সাধারণ দর্শনে দেখা যায়, ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী খালের মাঝখানে হাঁটছেন বা সাঁতার কেটে বিদ্যালয়ে এসে থাকেন। কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে নিচ্ছেন দম, আর কিছুজন রোদে ভেজা কাপড় শুকাচ্ছেন।
খал পার হওয়ার সময় মো. ছগির উদ্দিন বলেন, ১৫ নভেম্বর দুই শিশু সাঁতার কাটতে গিয়ে এক শিশুটি ভেসে যায়। স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে তিনশ ফুট দূর থেকে তাকে উদ্ধার করেন। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থা চলমান থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন এখনও কোনো স্থায়ী সমাধান করেনি।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রোকশানা আক্তার জানায়, তার বাড়ি তুলাতলী হামিদচরপাড়া। স্কুলে যেতে বাঁধা হয় এই বমুখাল। সাঁতরে যেতে হয়। ভয় হয়, বড় হয়ে হয়তো আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সে দাবি করে, দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের। একই বক্তব্য শাফিকুল ইসলাম, আনিশা আক্তার ও রাহান মিয়া মতেও।
অভিভাবক শামসুল হক বলেন, আমার দুই ছেলে স্কুলে পড়ে, তবে খালের কারণে অনেক সময়সাধ্যের অপচয় হয় ও ঝুঁকি থাকে। সম্প্রতি এক শিশু খালের কুমে পড়ে যায়, তাকে উদ্ধার করতে হয়েছে। তারও দাবি ব্রিজ নির্মাণের জন্য।
উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিষ বিশ্বাস জানান, এই নামকরা জায়গায় ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
গজালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উসাচিং মার্মা জানান, প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই খাল দিয়ে স্কুলে এবং বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্রিজের দাবি করে আসছেন। এর নির্মাণ হলে কৃষকদেরও উপকৃত হবেন।
প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, শিশু শিক্ষার্থী ও জনস্বার্থে এই খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ অবিলম্বে প্রয়োজন। ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।





