শুক্রবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব বাজারে বিটকয়েনের দাম হঠাৎ কমছে

গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে মার্কিন ডলারের মূল্যমানের হিসাবে ক্রিপ্টো বাজারের মোট মূলধননে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ কোটি ডলার কমে গেছে। মূলত, বিটকয়েন থেকেই এই পতনের পথ শুরু হয়, যা বর্তমানে ক্রিপ্টো জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। অক্টোবরের শুরুতেই বিটকয়েনের দাম ছিল রেকর্ড ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার, কিন্তু গত শুক্রবার এটি প্রায় ৮১ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। তার পরের সপ্তাহে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও দাম আবার ওঠানামা করছে, গত সোমবার এটি ৮৮ হাজার ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

অন্যদিকে, গোল্ডপ্রাইস ডট অর্গের তথ্যমতে, এক মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৯০ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ছয় মাসে এটি বেড়েছে মোট ৭৫৪ ডলার ৪৫ সেন্ট। এই পরিস্থিতিতে দেখা যায়, নভেম্বরে ক্রিপ্টো বাজারটি সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে, যেখানে বাজারের অবস্থা এখনো স্পষ্ট নয়। জার্মানির ডয়েচে ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, খুব শিগগিরই বিটকয়েনের বাজারে সমাধান আসবে, এমনটা এখনই মনে হচ্ছে না।

এখনকার বাজার পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে, যেখানে আগে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা বেশি ট্রেড করতেন, সেখানে এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের সহজলভ্যতা, সুবিধাজনক নীতিমালা এবং আরও কার্যকরী বিনিয়োগের মাধ্যমে বাজারে যোগ দেওয়া সত্ত্বেও, বিটকয়েনের মূল্য অস্থিরতা অব্যাহত আছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বিটকয়েনের পতন এখন অনেক বেশি গভীর। গত কয়েক বছরের তুলনায়, এই পতনটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এখন পর্যন্ত, বিটকয়েনের মূল্য থেকে সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ৩০ শতাংশ পতন ঘটেছে। অন্যদিকে, মার্কিন শেয়ারবাজারের সূচক এসঅ্যান্ডপির সূচকেও সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ থেকে ৩ শতাংশ হ্রাস পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০২২ সালে স্যাম ব্যাংকম্যানের গ্রেপ্তারির পর যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, চলতি নভেম্বর তা আরও গভীর চেহারা নিচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করছে উদ্বেগ। একদিকে, ফেডারেল রিজার্ভের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—কবে তারা সুদহার কমাবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বাজারে সৃষ্টি হওয়া বুদবুদ কতদিন টিকে থাকবে, সেটাও নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

স্টক ও ডেজিটাল অ্যাসেটের সম্পর্কটিও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ সুদহারে বিনিয়োগের খরচ বেড়ে যায়, ফলে বিনিয়োগের সক্ষমতাও কমে যায়। ১০ অক্টোবর থেকে হঠাৎ করে বাজারের অবনতি শুরু হয়, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা অতিসত্বর তাদের সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যখন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তুঙ্গে ওঠায় ব্যাপক বিক্রির ঝড় চলে আসে। এক দিনে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বাজার মূল্য কমে যায়। এই অস্থিরতা অনেক বিনিয়োগকারীর জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনল। ফলে, বিটকয়েনসহ অন্যান্য মুদ্রাগুলির মূল্য আরও অস্থির হয়ে পড়েছে।

আরেকটি কারণ হলো, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে স্পট বিটকয়েন ফান্ডের মাধ্যমে বাজারে নতুনভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার মূলধন ঢোকে, যা এই ক্রমবর্ধমান পতনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সব মিলিয়ে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের এই ক্রিপ্টো ধসের অন্যতম কারণ হলো নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও বাজারের অস্থিতিশীলতা।

পোস্টটি শেয়ার করুন