দক্ষিণ অাফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরোয়া মাঠে ভারত ব্যর্থতার নতুন এক দুঃসহ অধ্যায় শুরু করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে কোনো দেশের কাছে ভারতের এমন ভয়াবহ পরাজয়ের নজির ছিল না। কোলকাতার ইডেন গার্ডেনের পর অনুষ্ঠিত হয় গুয়াহাটির টেস্ট, যেখানে মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে শেষ হলো ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষা। এই ম্যাচে দক্ষিণ অাফ্রিকা মাত্র ৪০৮ রানে হারিয়ে দিল ভারতকে, যা ভারতের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম বড় হার।
এই হারের মাধ্যমে ভারত তার নিজস্ব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একাধিক তিক্ত রেকর্ডের স্বাক্ষর রাখলো। এর আগে ২০০৪ সালে নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল ভারত। এছাড়া ২০০৬ সালে করাচিতে পাকিস্তানের কাছে ৩৪১ রানে হেরেছিল তারা। সেই সময় দু’দফা ইনিংস ব্যবধানে হারের পাশাপাশি রানসংখ্যায়ও ভারতের হারটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জের মতো।
তবে গুয়াহাটির এই হার তার কপালে কেবলই দাগ দেয় না, বরং নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। যেখানে ভারতকে দেওয়া হচ্ছিল ৫৪৯ রানের বিশাল লক্ষ্য, সেখানে তারা একদিন এক সেশনে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্বাগতিকরা শেষ পর্যন্ত ২৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে, ভারতীয় দখল থেকে ম্যাচটা চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে। শেষ দিন শেষে ভারত মাত্র ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায়, যা দিয়ে হার নিশ্চিত হয়।
অতীতে ভারতের এই ধরনের পরাজয় কোনও দলের অজস্র ঘটনা নয়, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিশেষ করে উল্লেখ্য যে, এটি ভারতকে তাদের নিজস্ব মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিয়েছে। এর আগে ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের কাছে ঘরোয়া সিরিজে হারার ঘটনা থাকলেও, এবার প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে এই ধাক্কা আরও বড়। এরপর, ২০২৫ সালে এসে, এটি দ্বিতীয়বারের মতো ভারত ঘরোয়া টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো, যা ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।
বিশ্বের অন্য দলগুলোর তুলনায়, ২১ শতাব্দীতে ভারতের ঘরোয়া মাঠে মোট চারটি টেস্ট সিরিজে হেরেছে। তবে কখনোই অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো দলের কাছে এই ধরনের ধবলধোলাইয়ের সম্মুখীন হয়নি ভারত। অন্যদিকে, দক্ষিণ অাফ্রিকা বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে তার দক্ষতা আর ধারাবাহিকতার প্রমাণ দিয়ে চলেছে। গুয়াহাটিতে তারা তাদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসহ জয়ের রেকর্ড গড়েছে, যা আগে দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪৯২ রানের জয়।
নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাভুমা, যিনি এই প্রথম ১২টি টেস্টের মধ্যে ১১টিতেই জিতেছেন, এর মাধ্যমে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড স্থাপন করেছেন। এই সাফল্য অপ্রতিরোধ্য ধারায় অব্যাহত রাখছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক।
এদিকে, এশিয়ায় ভারতের জন্য বছরগুলো ছিল উত্থান-পতনের। ২০২২ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ২-০ জয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানের মাঠে সিরিজ ড্র আর ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে ২-০ জয়ের মধ্যে দিয়ে দলের পারফরমেন্স উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে। কিন্তু ওপার থেকে মাঠে ইংরেজি বলের খেলা চলাকালীন, ভারতের মূল ব্যাটসম্যানরা আরও স্বস্তি পাননি। কোনো সেঞ্চুরি না থাকা এই সিরিজে ভারতের ব্যাটিং গড় ছিলমাত্র ১৫.২৩, যা রীতিমত একটি দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। এর আগে ২০০২-০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের সর্বনিম্ন গড় ছিল ১২.৪২।
প্রায় ২৫ বছর পরে, দুই বছর টানা ঘরোয়া সিরিজে হারের ঘটনা এই প্রথম ঘটল। এর আগে ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ভারত ঘরোয়া মাঠে কোনও টেস্ট সিরিজ হারেনি। কিন্তু এবার, দেশীয় এই পারফরম্যান্সে সাত মাসের মধ্যে পাঁচটি টেস্টে হারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিরল অধ্যায়। এটা স্পষ্ট করে দেয় যে, ক্রিকেটের এই অংশে ভারত এখনও অনেক উন্নতির ঢাল রয়ে গেছে। আবারও দেখাল, ক্রিকেটে সবশেষ বলটি কি করে ঘুরে যায়।





