শরীয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড বাতিল হওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকসেবা কোনোভাবেই ব্যাহত হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স ও এলসি সম্পর্কিত সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতই চালু থাকবে। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মনসুর বলেন, যদিও বোর্ডগুলো ভেঙে গেছে, তবে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না। ব্যবসা চালু থাকবে এবং পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি সহ সব কার্যক্রম অবাধে চলবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, ব্যাংকগুলো কার্যক্রম চালিয়ে রাখা এবং ধাপে ধাপে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও আইটি সিস্টেম একীভূত করে নেওয়া।
তিনি আরও প্রকাশ করেন, এই পাঁচ ব্যাংকের মোট ৭৫ লাখ আমানতকারী ও ৭৫০টি শাখা রয়েছে। লিকুইডেশন এড়াতে ও গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রথম ধাপেই কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগতভাবে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গভর্নর উল্লেখ করেন, ‘নন-ভায়েবল’ বা অব্যবহার্য ব্যাংক হিসেবে ঘোষিত এই পাঁচটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। সকালে এসব ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারিকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যার ফলে বোর্ডের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে; তারা আর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামি ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা। এর নতুন সমন্বিত ব্যাংকের পুঁজি হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে দেশের কোন ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা সম্ভব নয়।
গভর্নর জানান, এই ব্যাংকটি সরকারি মালিকানাধীন হলেও পরিচালনা হবে বেসরকারি ব্যাংকের মতো— পেশাদার ব্যবস্থাপনা, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো, এবং পৃথক শরিয়াহ বোর্ড গঠনসহ। তিনি বিশ্বাস করেন, ইসলামী ব্যাংকিং বাংলাদেশে ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার মূল্য সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বর্তমানে শেয়ারমূল্য নেগেটিভ, তাই ভ্যালু জিরো ধরা হবে এবং কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
আমানতকারীদের জন্য তিনি আশ্বাস দেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা সম্পূর্ণ টাকা তুলতে পারবেন। বড় অংকের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে, এর বিস্তারিত পরবর্তীতে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানানো হবে।
নির্বাচনকালীন পরিস্থিতিতে নতুন সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া কি বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এ প্রশ্নে গভর্নর বলেন, এটি দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত; সরকার পরিবর্তন হলেও এর কার্যকারিতা বজায় থাকবে।
এর আগে, অর্থনৈতিক দুর্বলতা থাকা পাঁচটি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোতে একটি বৃহৎ একক ইসলামি ব্যাংক গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তের কথা তাদের management কর্তৃপক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়েছে। পুরো একীভূতকরণ প্রক্রিয়া তদারকি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ভাঙা পাঁচ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চারটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছিল, আর একটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে নানা অনিয়ম ও অসংখ্য ঋণের মাধ্যমে এসব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গোপনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।





