বৃহস্পতিবার, ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ: সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠা দরকার

সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য এবং রাজস্ব ও পরিচালন ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস (ডিএমও) প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ কারিগরি সহায়তা মিশন। এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয় ‘ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক এক চলমান কর্মশালায়। এ কর্মশালাটি গৃহীত হয় গত সোমবার, বাংলাদেশ সচিবালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে, যা মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এই উদ্যোগটি অর্থ বিভাগের ‘ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় লক্ষ্যমাত্রা করে মূলত সার্বজনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এবং সেবা প্রদান সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চালানো হয়। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক মিশনের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বিভক্ত, যার ফলে সমন্বয়হীনতা, অপরিষ্কার ঋণের তথ্য এবং কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নেও সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ও নিরীক্ষিত ঋণ ডাটাবেসের অভাব এবং নগদ প্রবাহের পূর্বাভাসের অনুপস্থিতি কার্যকর ও দক্ষ ঋণ গ্রহণের জন্য বড় বাধা। অনুষ্ঠানে সরকারি পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুল মতিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. জিয়াউল আবেদীন, অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ও এসপিএফএমএস এর জাতীয় কর্মসূচির পরিচালক, এবং হাসান খালেদ ফয়সাল, অতিরিক্ত সচিব (ম্যাক্রোইকনমিকস-১)। অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণকারী ও বিশ্লেষকদের মতে, একটি কেন্দ্রীয় ও নিরীক্ষিত ঋণ ডাটাবেস, আইনী কাঠামো এবং দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ডিএমও প্রতিষ্ঠা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণের কর্তৃত্ব, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্য একটি সুসংগত আইনি কাঠামো তৈরির ওপর জোর দেয়া হয়। সেই সাথে দক্ষ পেশাদার নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক মর্যাদা ও ক্যারিয়ার উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে বলা হয়, যাতে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সঞ্চয় করা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মধ্যমেয়াদের মধ্যে ডিএমও আরও স্বায়ত্তশাসিত সত্তায় রূপান্তরিত হতে পারে, যেখানে তার কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে, যেমন দায়বদ্ধতা তদারকি, বিনিয়োগকারী সম্পর্ক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ১৯৮০-এর দশক থেকে বেশ কিছু দেশ কেন্দ্রীভূত ডিএমও মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ঋণ খরচ কমাতে, ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মিশনটি আরও জানায়, সফল ডিএমও সাধারণত তিনটি মূল ইউনিটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়: এগুলো হলো- ফ্রন্ট অফিস (ঋণ গ্রহণ ও বাজার লেনদেন), মিডল অফিস (ঝুঁকি ও কৌশল), এবং ব্যাক অফিস (নিষ্পত্তি, তথ্য সামগ্রী, হিসাব ও প্রতিবেদন)। তাদের মতে, দেশের রাজনীতি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি, পর্যায়ক্রমে পুনর্গঠন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং টেকসই সমন্বয় এই উদ্যোগের সফলতা নিশ্চিত করবে। একবার কার্যকর হলে, এই একীভূত ডিএমও বাজারের আস্থা বৃদ্ধি করবে, অর্থায়ন খরচ কমাবে, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সাহা্য্য দেবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন