শুক্রবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় টোলমুক্ত ফুলকপির হাট বসছে

জেলার মাঠে মাঠে রবি মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি চাষে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন এলাকায় এখন শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, শিম, পটল, বেগুন, মুলা, মরিচসহ নানা ধরনের শাক-সবজি। ভালো ফলনের জন্য তারা নিয়মিত পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রায় এক মাস আগে থেকেই শীতকালীন সবজির হাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে ফুলকপি উৎপাদন বেশি হওয়ায় সরবরাহও বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে দাম কিছুটা নিম্নমুখী। তবুও কৃষকরা এখন সাধারণ হাটে বিক্রি না করে অস্থায়ী বাজারের মাধ্যমে নিজেরা সরাসরি ফুলকপি বিক্রি করছেন। নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ডাক্তার মোড় নামে এক স্থানে স্থাপন হয়েছে এই অস্থায়ী ফুলকপি বাজার। এখানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১,২০০ টাকা। দেড় ঘণ্টার এই টোলমুক্ত হাটে দৈনিক বেচা-কেনা হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এই বাজারের ফুলকপি দেশের বিভিন্ন শহর ও জেলার চাহিদা মেটিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগরীতে পৌঁছে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরির মৌসুমে আনুমানিক ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর земির উপর বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে ফুলকপি নিয়ে থাকা জমির পরিমাণ ১২ হেক্টর, যেখানে থেকে আঞ্চলিক উৎপাদন হয় প্রায় ২ হাজার ১০০ টন।

সদর উপজেলার বাতাসের পাশে ডাক্তার মোড়ের অস্থায়ী পাইকারি ফুলকপি হাটটি গত ১০ দিন ধরে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয়, যা চলতে থাকে সকাল ৭টায় পর্যন্ত। এই হাটে ভ্যান, সাইকেল বা কাঁধে করে কৃষকরা ফুলকপি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কৃষকরা আগের দিন বিকেলে তাদের খেত থেকে সংগ্রহ করে রাখেন। প্রতি মণ ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১,২০০ টাকা। শহর থেকে এই হাটের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার।

চক-বালুভরা গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন বলেন, তিনি ১৫ কাঠা জমিতে প্রায় ২,২০০টি ফুলকপি গাছ রোপণ করেছেন, যার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তিনি প্রত্যাশা করছেন পিস প্রতি ২৫ টাকায় বিক্রি করে মোট বিক্রয় হবে ৫৫ হাজার টাকা, অর্থাৎ খরচ বাদে লাভ হবে অন্তত ৪০ হাজার টাকা।

হাঁপানিয়া গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, তিনি ১০ কাঠা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। এখন ৫০ কেজি ফুলকপি এই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ টাকায়। ১৫ আগে তিনি প্রতি মণ বিক্রি করেছিলেন ১,৮০০ টাকায়। এই হাটে বিক্রির জন্য তিনি খাজনা (টোল) ও ভাড়া দিতে হয় না, যার কারণে কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক।

বর্ষাইল গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এ হাটে ফুলকপি কেনা-বিচা হয় প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার, যা ট্রাকযোগে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্রতিদিন এই হাটের মাধ্যমে দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয় লক্ষাধিক টাকার ফুলকপি। আশা করা যাচ্ছে, উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম কিছুটা কমে আসবে। এই হাটটি আগামী এক মাস ধরে চালু থাকবে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক মোছা. হোমায়রা মণ্ডল জানান, কিছু কৃষক আগাম ফুলকপি চাষ শুরু করেছেন যাতে তারা ভালো দাম পান। প্রথমদিকে উৎপাদন কম থাকায় দাম ভালো ছিল, তবে এখন উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমে গিয়েছে। তবুও বাজারে এখনও ভালো দাম রয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, রঙিন ফুলকপি চাষে বিশেষ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। অন্যান্য কপির তুলনায় এর স্বাদ অনেক বেশি, আর নতুনত্বের কারণে ভোক্তাদের চাহিদাও বেশি। এই কারণে বাজারে চাহিদা থাকছে এবং এর উৎপাদন বাড়ছে। তিনি বলেছেন, অনেক কৃষক এখন রঙিন ফুলকপি চাষ করছেন, যার সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

অতিরিক্ত তিনি বলেন, শুধু নওগাঁর না, আশেপাশের জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলাতেও রঙিন ফুলকপি চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের কৃষক জালাল হোসেন বলেন, তিনি প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। প্রায় ১২ শতক জমিতে তিনি হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি গাছ লাগিয়েছেন। প্রথম চাষ হলেও ফলন ভালো হয়েছে বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানালেন।

জালাল হোসেন বলেন, এই ফুলকপির সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে কম সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োজন; যা সাধারণ সাদা ফুলকপির তুলনায় অনেকেই কম লাগে। তিনি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলেন, যদি অন্য কৃষকরা রঙিন ফুলকপি চাষ করেন, তাহলে বড় অঙ্কের লাভবান হওয়া সম্ভব। এই মৌসুমে একটিই ফুলকপি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯০ টাকা, পরে তা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৪০ টাকায়। খুচরা বাজারে এর দাম আরও বেশি।

পোস্টটি শেয়ার করুন