সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রবল ঝড় ও ভারি বর্ষণের ফলে দেশটির জনজীবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা শহরের প্রধান সড়কগুলো পুরোপুরি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে, যার ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাইয়ের এমিরেটস এয়ারলাইন্স মোট ১৩টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। পাশাপাশি, পার্শ্ববর্তী শারজাহ বিমানবন্দরেও অসংখ্য ফ্লাইটের পরিবর্তন ও বাতিলের খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত থেকেই শুরু হওয়া ঝড়ের ঝনঝন করে বর্ষণে অনেক বাসিন্দার ঘুম নষ্ট হয়েছে।
শুক্রবার সকালে শারজাহর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে ডুবে যায়। অনেক বাসিন্দাই পানি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে পানির মধ্যে দিয়ে একটি সাইকেল চালানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, চাকার প্রায় পুরোটা পানির নিচে চলে গেছে। এই দৃশ্যটি ২০২৪ সালের এপ্রিলের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, যখন রেকর্ড বৃষ্টিপাতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।
বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে বৃহস্পতিবারই দুবাই পুলিশ বাসিন্দাদের অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকেই দুবাইয়ের বিভিন্ন রাস্তায় পানির স্রোত বা জল সরানোর জন্য পাম্পিং ট্রাকের ব্যবস্থা দেখা গেছে।
দুবাই বিমানবন্দরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনেক ফ্লাইটের বিলম্বের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া, আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রও বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দুবাই ও আবুধাবি সহ সারাদেশে বৃষ্টি ও ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে।
অতিরিক্ত, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলেও ব্যাপক ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে কাতার ও সৌদি আরবের ওপর, যেখানে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘আরব কাপ’ ফুটবলের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে স্থগিত ও পরবর্তীতে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
গত বছর আমিরাতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভারী ছিল এবং এতে কমপক্ষে চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া, কয়েক দিন ধরে দুবাই অচল হয়ে পড়েছিল।
বিশ্ব আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন’ এর গবেষণা বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি আর বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্ভবত এই চরম আবহাওয়ার অন্যতম কারণ।





